ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল কাস্টমসে রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
বেনাপোল কাস্টমসে রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি

বেনাপোল (যশোর): আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, শুল্ক ফাঁকি আর ঘুষ বাণিজ্যের কারণে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে রাজস্ব ঘাটতিতে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতির অংক দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়। সেই হিসেবেই বন্দরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা।

অনিয়ম বন্ধ হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। তবে বৈধভাবে বাণিজ্যেরে ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব ঘাটতির কারণ বলে মনে করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

জানা যায়, দেশের ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩ বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য দেশে যতোগুলো বন্দর রয়েছে তার মধ্যে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অন্য যেকোনো বন্দরের তুলনায় উন্নত। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। সে কারণে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

এ সুবিধা পেয়ে দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করে থাকেন। যেদিন ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয় সেই দিন থেকে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আমদানি করা পণ্য বন্দরে প্রবেশ করে।

কিন্তু সূত্র বলেছে, পণ্য আমদানির বেলায় এ বন্দরে চলে নানা অনিয়ম। কখনও পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, আবার ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য এনে সরকারের শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। আর এসব কাজে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে সহযোগিতা করে কাস্টমসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এতে কাঙ্ক্ষিত শুল্ক আয় না হওয়ায় চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ছে সরকার।

কাস্টমস সূত্র থেকে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ২১ মে পর্যন্ত গত ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।

এরআগে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তখনও একই কারণে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বাংলানিউজকে বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের ওপর রাজস্ব ৪ ডলার, বেনাপোল বন্দরে ওই একই পণ্যের ওপর সাড়ে ৪ ডলার শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩৮ হাজার টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, তখন তার দ্বিগুণ আয় হবে।

সাধারণ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, এক শ্রেণী ব্যবসায়ীরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এটাও রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। এছাড়া বৈধ আমদানি চালান কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২-৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার। এসব অনিয়মের কারণে দিন দিন এ বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস নামছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহাসিন মিলন বাংলানিউজকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, জায়গা সংকটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বেনাপোল বন্দর একটি আধুনিক বন্দরে রূপান্তরিত হবে।  

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ বন্দরে কাস্টমস আইন এবং নিময়-কানুন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার কারণে কিছু সুবিধাবাদী আমদানিকারকরা এ বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। এতে রাজস্ব আয় কমেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।