ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরগরম খ্যাতির ‘চিকন সেমাইপল্লি’

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
সরগরম খ্যাতির ‘চিকন সেমাইপল্লি’ রোদে সেমাই শুকাচ্ছেন এক বৃদ্ধা। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: নিশ্চিন্তপুর, বেজোড়া, ঘাটপাড়া, শ্যামলা কাথিপাড়া, শ্যামবাড়িয়া, কালসিমাটি, রবিবাড়িয়াসহ প্রায় ১০টির অধিক গ্রাম ‘চিকন সেমাইপল্লি’ নামে পরিচিত।  বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর উপজেলায় এসব গ্রামের অবস্থান।

এসব গ্রামে রয়েছে অন্তত শতাধিক সেমাই কারখানা। গ্রামের এসব কারখানায় কাজ করেন প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক।

এসব শ্রমিকের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। সংসারে বাড়তি আয়ের আশায় নারী শ্রমিকরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সেমাই কারখানার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখেন।

এ চিকন সেমাইয়ের কিন্তু আলাদা একটা খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। খ্যাতির এ চিকন সেমাইয়ের রঙটা ধপধপে সাদা। আর এ সাদাকে নিয়েই যতো রঙিন স্বপ্নে বিভোর কারিগররা। প্রত্যেক ঈদের আগে তাদের স্বপ্নের মাত্রাটা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।  

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর। আসন্ন এ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সরগরম খ্যাতির ‘চিকন সেমাইপল্লি’। দিনরাত সেমাই তৈরি করে চলেছেন স্বপ্নবাজ কারিগররা। বিদ্যুৎচালিত মেশিনের পাশাপাশি হস্তচালিত মেশিনেও তৈরি হচ্ছে খ্যাতির চিকন সাদা সেমাই।

সেমাই শুকাতে ব্যস্ত নারী ও পুরুষ শ্রমিক।  ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার একটি টিনের ঘরের ভেতরে একপাশে সেমাই তৈরির বিদ্যুৎচালিত দু’টি মেশিন। অপরপাশে থাকার জন্য চৌকি। একটি টুলের ওপর বসেছেন ঘরের মালিক সাহেরা বেওয়া। তার সমানে রাখা গামলা ভর্তি প্রসেসিং করা ময়দা। সেই ময়দা তিনি মেশিনের ভেতর ফেলছেন। মেশিনে ঘুরে ঘুরে সেই ময়দা থেকে চিকন সেমাই হয়ে বেরিয়ে আসছে।

এরপর নিয়মানুযায়ী সেমাই শুকানোর পালা। মেশিন থেকে সেমাই বের হওয়ার পর তা শুকানোর জন্য পাটের বস্তা বা ত্রিপলের ওপর রেখে সেমাই গুলো রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। এ সময় সেমাইগুলো নেড়ে চেড়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের শলাকা ব্যবহার করা হয়।

সেমাই কারখানার নারী শ্রমিক রাহিমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, কমবেশি সারাবছরই চাহিদা অনুযায়ী এ সেমাই বানানো হয়। তবে প্রত্যেক বছর রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে সেমাইয়ের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শবে বরাতের পর থেকে সেমাই উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন মালিকরা।

অপর নারী শ্রমিক সুফিয়া বিবি বাংলানিউজকে জানান, শাহজাহানপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িই যেনো একেকটি সেমাই কারখানা। প্রত্যেক কারখানায় কমবেশি প্রতিদিন গড়ে ২০ খাঁচি সেমাই বানানো হয়। একেক খাঁচিতে ৪৮০-৫০০ কেজি সেমাই থাকে।

শুকানো সেমাই কারখানায় নিচ্ছেন দুই নারী শ্রমিক।  ছবি: আরিফ জাহান

আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তুলনামূলকভাবে সেমাই কারখানার ভারি কাজগুলো পুরুষ শ্রমিকরা করে থাকেন। এরমধ্যে ময়দাসহ মালপত্র কেনা, সেমাই শুকানোর পর তা খাঁচিতে ভরা, অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্নস্থানে সেমাই পৌঁছানো ইত্যাদি। মূলত কাঁচামাল কেনা ও বিক্রির কাজটাও পুরুষরাই করে থাকেন।

সেমাই ব্যবসায়ী আলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, খ্যাতির চিকন সাদা সেমাই কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী বগুড়ায় আসেন। আবার পরিচিত পাইকাররা অগ্রিম অর্ডার দিয়ে সেমাই কেনেন।

এছাড়া এখানকার তৈরি সেমাই ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা কেনেন বলেও জানান ব্যবসায়ী আলাল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এমবিএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।