ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মরিচ-শসা ও মাছের দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৯
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মরিচ-শসা ও মাছের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মরিচ-শসা ও মাছের দাম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চাঁদ দেখা গেলে বুধবার (০৫ জুন) ঈদ। এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া মরিচ বিক্রি হচ্ছে  ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। 

তবে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। অপরিবর্তিত রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর সবজির সরবরাহ কমে যাবে। তখন দাম বাড়তে পারে বলে জানান তারা। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিবছর এ সময়ে সবজির দাম বেশিই থাকে। এবার তো উল্টো হয়েছে বাজারে এখন সবজি সবচেয়ে সব দামে পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার (০৪ জুন) রাজধানীর সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের এক দিন আগে সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা মরিচ, শসা ও মাছের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সপ্তাহ ব্যবধানে মরিচের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে যে মরিচ বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, সেই মরিচ এ সপ্তাহে এসে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।  

শসার দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া শসা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে রাজধানীর বাজারগুলোতে স্বস্তি দিচ্ছে অন্যান্য সব সবজির দাম। বাজার ও  মানভেদে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। বেশি দামের সবজি রয়েছে শুধু বেগুন ও লাউ।  

ভালোমানের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।  প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, বরবটি ৪০, কাঁকরোল ৪০ টাকা,  ধুন্দল ৪০ টাকা, এছাড়া ঝিঙা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

এছাড়া সজনে ডাটা ৪০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিচ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে। আর আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে।

সবজি ব্যবসায়ী জামাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিনদিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য আজকে সবজির আমদানি কম। যেখানে  আগে ৭০ ট্রাক সবজি আসতো এখন আসছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক। ফলে সবজির সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গেছে। এর প্রভাব পড়বে ঈদের দিন থেকে।  আর ঈদের দিন এমনিতেই সব বন্ধ থাকে তাই ঈদের দিন থেকে পরবর্তী একসপ্তাহ সবজির দাম চড়া থাকবে।  

তিনি বলেন, এ সময়ে মরিচের দাম বাড়ার কারণ কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে মরিচ তুলতে পারেনি এজন্য বাজারে সরবরাহ কমেছে আর সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে। এছাড়া গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। নতুন সবজি আসছে বাজারে ফলে সরবরাহ বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা একটু কমেছে।  

এর কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। যেহেতু কাঁচা পণ্য সংরক্ষণ করা যায় না। তাই একটু কম দামে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন সব ধরনের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।  

রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের চড়া দামই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাংস। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা কেজি, প্রতি পিস কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৮০ টাকা। আর দেশি মুরগি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে।  

এছাড়া বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।  

মাংসের দাম না বাড়লেও বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম বরং বেড়েছে। বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের প্রতি পিস ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এর চেয়ে বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা প্রতি পিস।

এছাড়া রুই কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৭০০ টাকা, বাইম মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, পোয়া ৭০০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, পাবদা  ৮০০ টাকা, বোয়াল ৮০০ টাকা, শিং ১০০০, দেশি মাগুর ১০০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২৫০ টাকা, চাষের কৈ ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

মাছ ব্যবসায়ী সুমন পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া। এ সপ্তাহে এসে আরেক দফা দাম বাড়লো। কারণ এখন ঢাকাতে দূরের মাছ কম আসছে। ঈদে পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ থাকায়। তাই বাজারে সরবরাহ অর্ধকে নেমে গেছে।  

‘তাই মাছের দাম সহসা কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ এবার বৃষ্টি খুব একটা হয়নি। যদি বৃষ্টি অথবা বন্যা হয় তাহলে হয়তো মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে। আর এ মৌসুমে সবসময়ই মাছের দাম চড়া থাকে। ’

আগের দামেই বিক্রি  হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮  থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাওয়ের চাল ৯০ থেকে ৯৫।  

প্রতিকেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া কমেছে ডিমের দাম।  

ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছেন ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ টাকা।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলো থেকে নিষিদ্ধ মানহীন ৫২ পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে নিলেও অলি-গলির দোকানগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য দোকানের সামনে রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়নি।  

দোকানিরা বলেছেন, ‘মানসম্পন্ন’ পণ্যের পেছনে রেখে মানহীনগুলো বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে তারা জানান, তারা সরাসরি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য নেয় না। বাজারের বড় দোকান থেকে কিনে এনে মহল্লার দোকানে বিক্রি করে। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের মাল নিতে আসে না। আর দোকানে নিয়ে গেলে বলে কোম্পানি আসলে খবর দিবে।  

‘তাছাড়া গলির ভিতরে তো মোবাইল কোর্টও আসে না। কি করবো ভাই টাকার কেনা জিনিস ফেলে দেবো? কোম্পানিগুলো ফেরত না নিলে আমাদের কিছু করার নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করছি। ক্রেতারাও নিচ্ছে। তারা না নিলে জোর করে দিই না,’ বলেন ব্যবসায়ীরা।  

গত ১২ মে নিম্নমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে নিদের্শ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায়ের প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা  নিতে দেখা যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯  
জিসিজি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।