ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্রেতা কম রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৯
ক্রেতা কম রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে রাজধানীর ঈদভাঙা বাজারে ক্রেতা কম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ঈদের পরদিন জমে ওঠেনি রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারগুলোতে নেই চিরচেনা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক নেই বললেই চলে। ‘ফাঁকা’ ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারেও সবজিসহ সব পণ্যের চাহিদা-জোগান দুটোই কম। 

এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। ফলে বাজারে ডিম ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে।

তবে আবার চাহিদা কম থাকায় কিছু জিনিসের দাম কমেছেও। ক্রেতা কম থাকায় মাছ ও সবজির দাম কমেছে। বাজারে শুধু কিছু সবজির দোকানে চলছে বেচা কেনা। এখনও মোকামমুখী হননি খুচরা বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের বাজার জমে উঠতে আরো দুই তিন দিন লাগবে। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়েছেন মানুষ। শুক্র ও শনিবার ঈদের ছুটি শেষে গ্রামমুখী মানুষ শহরমুখী হলে আবার জমে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার।  

তার আগপর্যন্ত চলবে ঢিমেতালে। ঢাকায় পুরোপুরি লোকজন না ফেরা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও জোগান কোনোটি স্বাভাবিক হবে না বলে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, নয়াবাজার, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, রায়সাহেব বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগে একচেটিয়া দাম বেড়েছিল বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের। রমজানের আগে ও রমজান মাসেও দাম বেড়েছিল কয়েক দফায়। যার মধ্যে ছিল বেগুন, শশা, পেঁপে, মাংস, মশলা থেকে শুরু করে রমজান ও ঈদে বাড়তি চাহিদায় থাকা বিভিন্ন পণ্য।  

ঈদের পর ক্রেতা সংকটে ভুগছে বাজারগুলো। তবে এর মধ্যেও বেড়েছে ডিম ও গরুর মাংসের দাম। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা দুইদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।  

আর ঈদের আগের দিন হটাৎ বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। যা ঈদের দুই দিন আগে বিক্রি হতো ৫৫০ টাকায়। আর চাঁদ রাত বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকা কেজি।  

ঈদের পর তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজিতে। সে হিসেবে তিনদিনের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা।

এছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের চড়া দামই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগির মাংস। ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা কেজি; প্রতি পিস কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৮০ টাকা। আর দেশি মুরগি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এছাড়া তুলনামুলক চাহিদা কম থাকায় খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

মাংস ব্যবসায়ী পারভেজ বাংলানিউজ জানান, চাঁদরাত থেকে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। কারণ ঈদের আগে কয়েকদিন গরুর গাড়ি ঢাকায় ঢুকেনি। তাই মোকামে গরু কম আসায় দাম বেড়েছে। আর আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। গরুর মাংসের দাম বাড়লেও খাসি ও মুরগির মাংসের দাম আগের মতই রয়েছে।

ডিম ব্যবসায়ী আবলু হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিনদিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ডিমের গাড়ি ঢাকায় আসতে পারেনি। ফলে চাহিদার তুলনায় ডিম সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। আমরা ঈদের আগে প্রতি ডজন ডিম ৭০ টাকায় কিনে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করছি।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে স্বস্তি দিচ্ছে অন্যান্য সব ধরনের সবজির দাম। বাজার ও  মানভেদে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। বেশি দামের সবজি রয়েছে শুধু বেগুন ও লাউ।  

ভালোমানের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।  প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা, কচুরলতি ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, বরবটি ৪০, কাঁকরোল ৪০ টাকা,  ধুন্দল ৪০ টাকা। এছাড়া ঝিঙা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

সজনে ডাটা ৪০ টাকা কেজি,  লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে। আর আদা  ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে।

সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আজিজ বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। তাই সবজিও নেই। ক্রেতা না থাকলে সবজি এনে কি করবো? 

‘অল্প আনি অল্প বিক্রি করি। লোকজন ঢাকায় আসুক, তখন বাজারের কাস্টমারও থাকবো, আমগো দোকানে সবজিতে ভরা থাকবো। আগামী রোববার থেকে রাজধানীর বাজারগুলো জমে উঠবে বলে,’ মনে করেন তিনি।

ঈদভাঙা বাজারে মাছের সরবরাহের পাশাপাশি কমেছে চাহিদাও। চাহিদা কমায় প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। তবে তুলনামূলক বাজারগুলোতে ইলিশের দাম বেশি কমেছে। ঈদের আগে বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের প্রতি পিস ইলিশ মাছ বিক্রি হত ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়।  

যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর এর থেকে বড় ইলিশ ঈদের আগে বিক্রি হতো ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা প্রতি পিস। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

এছাড়া রুই কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ আইড় ৭০০ টাকা, মেনি মাছ  ৪০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৬০০ টাকা, বাইম মাছ ৭০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ টাকা, পোয়া ৫০০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, পাবদা  ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ টাকা এবং চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে।  

মাছ ব্যবসায়ী মধ্যম গোস্বামী বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া থাকলেও বর্তমানে মোকামে মাছ কম আসছে। কারণ এখন শহরের থেকে গ্রামে চাহিদা বেশি। তাই শহরের বাজারে দাম কমলেও গ্রামের বাজারে ঠিক আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গ্রামমুখী লোকজন শহরমুখী হলে দাম আবার আগের মতো হবে।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাওয়ের চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।  

প্রতি কেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খেসারি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৯  
জিসিজি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।