ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাসযোগ্য নগর গড়তে প্রয়োজন সদিচ্ছা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
বাসযোগ্য নগর গড়তে প্রয়োজন সদিচ্ছা

ঢাকা: বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে নীতিমালা মেনে ভবন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় মানুষের সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিকল্পিত উন্নয়নের সদিচ্ছা থাকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। বিশেষজ্ঞদের মত, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে নিরাপদ ও বাসযোগ্য ঢাকা। 

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠেকে তারা এ মত ব্যক্ত করেন।  

দৈনিক কালের কণ্ঠ ও ওরিয়ন গ্রুপের উদ্যোগে ‘বাসযোগ্য নগর গঠনে করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।  

তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন মহল থেকে চাপ এসেছে, এরপরও পিছু হটে যাইনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কাহিনীর পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি জড়িতদের বিরুদ্ধে।  

‘আমি ঘোষণা দিয়েছি, রাজউকে কোনো তদবির চলবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ’ 

‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে’ এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমরা পূর্বাচলসহ ঢাকার পাশে নতুন শহর গড়ার ক্ষেত্রে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ করে সেখানেই ধ্বংস করা হবে। এতে পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের আইনের অস্পষ্টতা আছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও সড়ক পরিবহন আইনও করতে পারলাম না। এটাও আমাদের দুর্বলতার একটা জায়গা। এক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। মোট কথা সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে। সবার অংশগ্রহণে দেশ এগিয়ে যাবে।  

কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, অতিরিক্ত মানুষের চাপে ঢাকা চেহারা হারিয়েছে। মানুষের চাপে এখন ঢাকায় বসবাস করা কঠিন। আকাশ থেকে তাকালে শুধু ইট কংক্রিটের ভবন দেখা যায়। গ্রিন সিটি করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার সেভাবেই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, পরিচ্ছন্ন রাজধানী গড়তে বর্জ্য অপসারণে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে আরো উদ্যোগী হওয়া দরকার।  

নগরবাসীকে রাজউকের আইন মেনে বাড়ি তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড মেনে দক্ষ প্রকৌশলী দিয়ে বাড়ি তৈরি করুন। কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে না পারলে ভূমিকম্প কিংবা বড় ধরনের দুর্যোগে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।  

গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত অতিথিরা।  ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজবাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যদি শুধু পরিকল্পনা নিতে হয়, তাহলে এর বাস্তবায়ন কখন হবে? এখনও নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়। আমি মনে করি এখন সেভাবে সরকারের সীমাবদ্ধতা নেই। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দরকার।  

‘আসুন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে অঙ্গীকার করি যে, ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলার। ’ 

বৈঠকে উন্নত নগর গঠনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, আমরা নতুন ভবনগুলোতে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রেখেছি। রাজধানীতে বস্তিবাসীর উন্নয়নে মিরপুরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুরে অবাঙালিদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং বস্তিবাসীকে নিয়েই এই আধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলা হবে। কারণ বস্তির উন্নয়ন না করলে আধুনিক ঢাকা কখনই বাস্তবায়ন হবে না।  

কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, পরিবেশ দূষণ ও যানজটের কারণে ঢাকায় বাস করা কঠিন। সরকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে, কিন্তু তারপরও যানজট কমছে না। বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে রাজউককে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে।  

অনুষ্ঠানে আবাসন খাত বিষয়ক সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে আগে বস্তিবাসীর উন্নয়ন করতে হবে। অনেকে বলে, বস্তিতে অপরাধ হয়। আগে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে হবে। তাহলে এ শহর বাসযোগ্য হবে।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে সরকার বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনকে কোনো বাজেট দেওয়া হয় না। সিটি করপোরেশনের আয়ের বড় একটা অংশ এ খাতে চলে যায়। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, যাতে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, বাসযোগ্য নগর গঠনে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। এটা যদি করা না যায়, তাহলে নিরাপদ নগর হবে না। ভবিষ্যতে যাতে ট্রাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট ছাড়া স্থাপনা নির্মাণ করতে দেওয়া যাবে না।  

বৈঠকে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মঞ্জুর আহমেদ, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল রিসার্চ কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান, ওরিয়ন গ্রুপের অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম এইচ খান, রাজউকের আরবান রিজিলেন্স প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
টিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।