ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আদা-রসুন-পেঁয়াজ: দাম কমাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
আদা-রসুন-পেঁয়াজ: দাম কমাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজ-রসুন ও আদা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের পাইকারি বাজারে রসুন, আদা ও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা কমেছে। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এখন যেভাবে সরবরাহ হচ্ছে, তা বজায় থাকলে দুই মাসে পেঁয়াজ ও আদার দাম আরও কমে আসবে। এরপর ভারত থেকে যদি তা আমদানি করা শুরু না হয়, তাহলে আবার দাম বাড়বে।

কিন্তু ১৫ দিন পর রসুনের দাম ২শ টাকা ছাড়াবে বলে আশঙ্কা তাদের।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চীন থেকে আমদানি করা রসুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিতে ১০টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। দেশি রসুন (নতুন) ৯০ থেকে ১শ টাকা, পুরাতন ১৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল চীনা রসুন পাইকারি ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা। দেশি রসুন নতুন ১৪০ টাকা পুরাতন ১৭০ টাকা। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেনি। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১০৫ টাকা।  

পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এক টাকাও কমেনি রসুনের দাম। বাজারে প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ২২০ টাকা। যা গতমাসেও ছিল ১৪০ টাকা। প্রতিকেজি দেশি পুরনো রসুন বিক্রি হয়েছে ২শ থেকে ২১০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৭০ টাকা। বাজারে আগাম আসা দেশি নতুন রসুনের কেজি ১৪০ টাকা। গতবছর এই সময় যা ৫০ টাকার নিচে ছিল। দেশি পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে গত সপ্তাহের মতোই প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পেঁয়াজ, রসুন ও আদার সবচেয়ে বড় আড়ত শ্যামবাজারের আমদানিকারকরা বলছেন, স্বল্পসময়ের জন্য দাম কমেছে।

তারা মনে করছেন, দেশের পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমেছে, ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে আরও কমবে। আর ভারতের আদার বাজারে আসায় দাম কমেছে সেটা দিয়ে দুই মাসের মতো বাজার ধরে রাখা যাবে। কারণ আদা আর রসুনের দাম নির্ভর করে চীনের ওপর। চীনের পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই বাজার নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আপাতত বলা যায় রসুনের দাম আর কমবে না বরং ১০ থেকে ১৫ দিন পর আগের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হবে। কারণ প্রায় একমাস আগের শিপমেন্ট করা চীনা রসুন এখন বাজারে আসছে। সেটা দিয়ে ১৫ দিন যোগান দেওয়া যাবে। আর গত একমাস শিপমেন্ট বন্ধ ছিল। আজ থেকে আবার শুরু হয়েছে। সেই পণ্য বাজারে আসতে একমাস সময় লাগবে। মাঝে যে গ্যাপ থাকবে সেসময় বাজারে রসুনের সরবরাহ কমে যাবে। তখন রসুনের দাম পাইকারিতে ২শ টাকার ওপরে চলে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

চীনের অনলাইন ‘চায়না ব্রিফিং’র তথ্য অনুযায়ী, চীনের স্টেট কাউন্সিল নববর্ষ উপলক্ষে ২৪ থেকে ৩০ জানুয়ারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। তবে দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। ১ ফেব্রুয়ারি আরেক নোটিশে বেশির ভাগ প্রদেশে এই ছুটি ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই প্রদেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেখানে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। যেমন হুবেই প্রদেশে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ঝিঝিয়ান প্রদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি প্রদেশে অবশ্য সীমিত আকারে কাজ হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের মেসার্স রাজবাড়ি ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী ও আদা রসুন আমদানিকারক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. মাজেদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশীয় বাজারে আদা ও রসুনের যে চাহিদা তার বেশিরভাগ পূরণ হয় চীন থেকে আমদানি করে। এখন বাজারে চীনা রসুনে সরবরাহ বেড়েছে। তাই কেজিতে ১৫ টাকা কমেছে। তবে এটা স্বল্পসময়ের জন্য। কারণ প্রায় একমাস আগের শিপমেন্ট করা চীনা রসুন এখন বাজারে আসছে। সেটা দিয়ে ১৫ দিনের যোগান দেওয়া যাবে। আর গত একমাস শিপমেন্ট বন্ধ ছিল। আজ থেকে আবার শুরু হয়েছে। সেই পণ্য বাজারে আসতে একমাস সময় লাগবে। মাঝে যে গ্যাপ থাকবে সেসময় বাজারে রসুনের সরবরাহ কমে যাবে। তখন রসুনের দাম পাইকারিতে ২শ টাকার ওপরে চলে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

শ্যামবাজারের আদা রসুন ব্যবসায়ী মেসার্স মাহি বাণিজ্যালয়ের সাগর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রসুনের দাম ১৫ টাকা কমেছে। চীনা রসুন বাজারে আসছে। তবে এ সরবরাহ কত দিন থাকবে তা জানি না। কারণ গত একমাস চীন থেকে নতুন করে রসুনের কোনো শিপমেন্ট হয়নি। তাই কিছুদিন পর আবার দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আদার দামও ১৫ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি কেরালার আদা পাইকারিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। যা আগে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। চীনা ও থাইল্যান্ডের আদা আগের দামেই (১০৫ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বাজারে মিশর ও বার্মার পেঁয়াজ বেশি। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। আর দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে মিশরের পেঁয়াজ ৬৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, বার্মার পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫ থেকে ১শ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ একই দাম আছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১০৫ টাকা।

সূত্রাপুর বাজারের খুচরা আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলরাম পোদ্দার বাংলানিউজ বলেন, আদা, রসুন ও পেঁয়াজ দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। আমরা বেশি দামে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ কিনে পরে তা বেশি দামে বিক্রি করি। কিন্তু পাইকারিতে গত দুই-তিনদিন ধরে কিছুটা দাম কমেছে। তাই আমরা সে দামে বিক্রি করতে পারিনি। কারণ আমাদের বেশি দামের কেনা পেঁয়াজ কিভাবে কম দামে বেচবো। পাইকারি বাজারে দামের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ টাকা ব্যবধান সবসময় থাকে। তবে দুই-একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারে দাম কমবে বলে তিনি আশাবাদী।

চীন থেকে গত অর্থবছর ১৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ১৪ হাজার কোটি) পণ্য আমদানি হয়, যার প্রায় পুরোটাই এসেছে চট্টগ্রামবন্দর দিয়ে। সামান্য পরিমাণ খালাস হয়েছে মোংলাবন্দরে। খোলা জাহাজ ও কনটেইনার জাহাজে এসব পণ্য সরাসরি ও সিঙ্গাপুরবন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আনা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।