ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাকশিল্পের বিকল্প কাজুবাদাম, এগিয়ে নিচ্ছেন ৩ মন্ত্রী

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
পোশাকশিল্পের বিকল্প কাজুবাদাম, এগিয়ে নিচ্ছেন ৩ মন্ত্রী

ঢাকা: দেশের তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত পাঁচ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ করলে বছরে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। আর এই দু’টি ফসল হতে পারে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পের বিকল্প।

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আয়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলায় দু’হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান করার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তারা একসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।

      

জানা যায়, প্রকল্প নিতে পারলে পাহাড়ের অন্তত দু’হাজার পরিবার কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আগ্রহী সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কফি ও কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করা হবে বিএডিসি, হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে।
 
আরও পড়ুন>>>কাজু বাদাম চাষে ব্যাপক সাফল্য পাহাড়ে

বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট ৩৫ লাখ মেট্রিকটন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১২ লাখ মেট্রিকটন উৎপাদিত হয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ঘানা ও বেনিনে। তবে এসব দেশ কাজুবাদাম প্রসেসিং করতে পারে না। আফ্রিকার দেশগুলো মাত্র ১০ শতাংশ প্রসেসিং করে। এদের কাজুবাদাম ভিয়েতনাম প্রসেসিং করে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করছে।  

সারা বিশ্বে কাজুবাদামের বাজার ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। বাকিগুলো ভারত ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে রপ্তানি হয়। কাজুবাদামের বড় মার্কেট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।  

আরও পড়ুন>>>পাহাড়ের ভাঁজে হবে কফি-কাজুবাদামের বাগান

কাজুবাদাম চাষ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাজুবাদাম চাষ করে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করছে ভিয়েতনাম। পার্বত্য চট্টগ্রামেও কফি-কাজুবাদাম চাষ করা হবে। এর চাষপদ্ধতি শেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষকদের ভিয়েতনামে পাঠানো হবে। কফি ও কাজুবাদামের চাষ এগিয়ে নিতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে চারা।

তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণে ভিন্নতা এসেছে। শুধু পোশাক শিল্প নিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে হবে।  পোশাকের বিকল্প হতে পারে কাজুবাদাম। এক সময় ভিয়েতনামে কাজুবাদাম চাষই হতো না।

কাজুবাদাম প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কাজুবাদামে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমার কাছে এ বিষয়ে প্রকল্প এলে অনুমোদনের ব্যবস্থা নেবো। যাতে পাহাড়ে এর চাষ সম্প্রসারণ করা যায়।  
   
কাজু বাদামের মূল চ্যালেঞ্জ পোস্ট প্রসেসিং ও সংরক্ষণ। আমাদের দেশে সেভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো মেশিন নেই, যাতে পোস্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায়। তাছাড়া সংরক্ষণও কেউ ঠিকমতো জানতো না। কাজু এমন একটি ফল যেটি কাঁচা বেশি খেতে পারবেন না। ফলটি হয় দুই স্তরে। উপরের অংশটুকু মোটা। নিচের অংশে বাদাম। এর ভিতরে এক ধরনের আঠাজাতীয় জিনিস থাকে। এটা মুখে বা হাতে লাগলে ঘা হতে পারে। আবার উপরের অংশটি প্রসেস করতে পারলে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া সম্ভব।  

তবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডেইলপাড়ায় ১০ বছর আগে দেশের প্রথম কাজুবাদামের কারখানা ‘গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে তোলেন তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ। তিনি পাহাড়ের কাঁচা কাজুবাদাম প্রসেসিং থেকে শুরু করে কারখানা নির্মাণ করে দেশি কাজুবাদামের সাফল্যের গল্প শোনান তিন মন্ত্রীকে। গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি)  দুবাইয়ে সাড়ে তিন হাজার কেজি কাজুবাদাম রপ্তানি করেন শাকিল। যার বাজারমূল্য ২৩ হাজার ডলারের বেশি। সাফল্যের গল্প শোনানোর পাশাপাশি রপ্তানি ও উৎপাদন কাজের কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

শাকিলকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কাজুবাদাম রপ্তানি ও উৎপাদন কাজ এগিয়ে নিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। আমার বিশ্বাস কিছুটা সুবিধা দিলে কাজুবাদাম ব্যাপক সম্ভাবনাময় কৃষি রপ্তানিপণ্য হবে। অনেক বৈদেশিক আয়ও সম্ভব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এমআইএস/এএ               
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।