ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৪৬০ কোটি টাকার চিংড়ি ক্রয়াদেশ বাতিল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
৪৬০ কোটি টাকার চিংড়ি ক্রয়াদেশ বাতিল

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারা পৃথিবী থমকে আছে। সেই সঙ্গে থেমে আছে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। অন্য সব খাতের মতো দেশের মাছ রফতানিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত এক মাসে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। ফলে এ শিল্পে দেখা দিয়েছেন চরম সঙ্কট। 

মৎস অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অর্ডার বাতিল হওয়া ২৯০টা কন্টেইনারে রফতানি আয় হতো ৪৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই গলদা, বাগদা ও হরিণা চিংড়ি।

বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য সাদা মাছ। এর মধ্যে ভেটকি, কাতলাসহ অন্যান্য মাছ রয়েছে।  

মৎস অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মৎস পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) মো. রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মাছের ২৯০টা কন্টেইনারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। করোনার পর ফের সব কিছু স্বাভাবিক হবে আশা করছি।

পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশে মৎস্য ও মৎস্যজাতপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ। সর্বশেষ বাংলাদেশ হতে বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬৮ হাজার ৬৫৫ মেট্টিক টন মৎস্য ও মৎস্য পণ্য রফতানি করে প্রায় তিন হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ১৫৮ মেট্টিক টন চিংড়ি রফতানি করে ২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা এবং ৩৫ হাজার ১৪৮ মেট্টিক টন ফিনফিস রফতানি করে ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব অর্জিত হয়েছে।  করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মাছ থেকে রাজস্ব আয় কমার পাশাপাশি রফতানি আয় হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

মাছের ফেলে দেওয়া অংশগুলো রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। এসব দিয়ে স্যুপ তৈরি হয় এবং পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই স্যুপের চাহিদা ব্যাপক। চিংড়ির মাথা ও খোসা, কাঁকড়ার খোলস, হাঙরের লেজ-ডানা-চামড়া, মাছের বায়ু থলি, পিত্ত ও চর্বি, কার্প জাতীয় মাছের আঁশসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়। ইতালি, জাপান, কোরিয়া, চীন, জার্মানি, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য রফতানি হয়। এসব দেশ করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত, ফলে রফতানিও বন্ধ।    

মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মাছের ক্ষেত্রে কি পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করা হচ্ছে। সারা দেশ থেকে নানা ধরনের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কভিড-১৯-এ প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। এ চাহিদা মেটানোর জন্য জরুরি পণ্য হিসেবে রয়েছে মাছ। মাছের অভ্যন্তরীণ ঘাটতি মেটাতে সব সময় খোলা রাখা হয়েছে অধিদপ্তর। অভ্যন্তরীণ চাহিদা ঠিক থাকলেও মাছের রেনু, পোনা উৎপাদন ও হ্যাচারিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশে মাছের উৎপাদন ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মোট অভ্যন্তরীণ মাছ ৩৬ দশমিম ২২ লাখ মেট্রিক টন এবং সামুদ্রিক ৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।

পুকুরে সবচেয়ে বেশি মাছ চাষ হয় ১৯ লাখ মেট্রিক টন, এর পরেই রয়েছে প্লাবনভূমি সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন।  এছাড়া নদীর মোহনায় ৩ দশমিক ২১, সুন্দরবনে ০ দশমিক ১৮, বিলে ১, কাপ্তাই লেকে ০ দশমিক ১০,  মৌসুমি মাছ চাষ ২ দশমিক ১৬, চিংড়ি ঘেরে ২ দশমিক আড়াই লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ৫ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন মাছ চাষ হয়েছে। এছাড়া বাওড়, হাওর, খাঁচায় ও পেন কালচারে মাছ চাষ হচ্ছে।  

মৎস অধিদফতরের উপপরিচালক (মৎস্যচাষ) সিরাজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক রফতানিতে করোনা আঘাত হেনেছে। তবে আমাদের জন্য নয়। দেশের অভ্যন্তরে যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেই জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করছি ও তথ্য নিচ্ছি। প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে ভ্রাম্যমাণভাবেও মাছ বিক্রি করবো সরকারের তরফ থেকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।