ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যস্ততা নেই রূপগঞ্জের জামদানিপল্লির কারিগরদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
ব্যস্ততা নেই রূপগঞ্জের জামদানিপল্লির কারিগরদের জামদানিপল্লি জনশূন্য। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: প্রতিবছর দুই ঈদকে কেন্দ্র ব্যস্ততা বাড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার জামদানিপল্লিতে। ঈদেই পুরো বছরের বেচাকেনা হয় এ পল্লিজুড়ে। তবে এবার করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ভিন্ন চিত্র এ পল্লির। কাজ নেই একেবারেই বেকার ও অলস সময় পার করছেন জামদানির কারিগররা। এর মধ্যে পরিবার নিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জামদানি শব্দটি মূলত ফার্সি শব্দ। এর অর্থ জাম।

জাম হচ্ছে পারস্য দেশীয় একশ্রেণীর উৎকৃষ্ট সুরা, আর দানি হচ্ছে বাটি বা পেয়ালা। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট সুরা ধারণকারী পাত্র।

জামদানির ঐতিহ্য প্রায় ২শ বছর আগের। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় সাদা কাপড়ের ওপর ফুলের ডিজাইন করা চড়া দামের জামদানি নেপাল, মুর্শিদাবাদ এলাকার নবাব ও বাদশাহরা ব্যবহার করতেন। সেই ২শ বছর আগে থেকেই বিখ্যাত রূপগঞ্জের জামদানি।

সামনে ঈদ তবে এবার কর্মব্যস্ততা নেই রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া জামদানিপল্লির তাঁতীদের। জামদানি কারিগররা এখন আড্ডা ও ঘরে কাজ করে সময় পার করছেন। উৎসবকে সামনে রেখে প্রতিবছর চাহিদা বহুগুণে বাড়লেও এবার তা নেই। গত বছর ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩০ কোটি টাকার জামদানি দেশের বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বিদেশে বেচাকেনা হয়েছে বলে জামদানি তাঁতীরা জানিয়েছেন। জামদানিপল্লি জনশূন্য।  ছবি: বাংলানিউজফুলতেরছি, ছিটার তেরছি, ছিটার জাল, সুই জাল, হাঁটু ভাঙা তেরছি, ডালম তেরছি, পার্টিরজাল, পান তেরছি, গোলাপ ফুল,  জুঁই ফুল, পোনা ফুল, শাপলা ফুল, গুটি ফুল, মদন পাইরসহ প্রায় শতাধিক নামের জামদানি বুনন হয় এই পল্লিতে। এগুলোর মধ্যে ছিটার জাল, সুই জাল ও পার্টির জাল জামদানির মূল্য সবচেয়ে বেশি। এসব জামদানি শাড়ির দাম পড়ে প্রতিটি প্রায় ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর শাড়ি বুনতে সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে ৬ মাস। এছাড়া ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকারও জামদানি শাড়িও রয়েছে। কম দামের মধ্যে ওই সব শাড়ি বুনতে সময় লাগে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস।

এখন জামদানি শিল্পীদের সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতী ছিল।

জেলা জামদানি তাঁতশিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, ৬০ হাজার লোক এ শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। বর্তমানে দেড় হাজার পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

কথা হয় জামদানি তাঁতী আক্তার হোসেন, আমির আলী, সাখাওয়াত ভূঁইয়ার সঙ্গে।

তারা জানান, বংশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এ পেশায় রয়েছেন তারা। প্রতিমাসে অল্প মূল্যেও ৩/৪টি শাড়ি বুনতে পারেন তারা। আর এ শাড়ি বিক্রির টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার। তবে এবার করোনার কারণে নেই সেই শাড়ির অর্ডার, তাই বেকার সময় যাচ্ছে তাদের।

বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হয়। এ রপ্তানির সঙ্গে জড়িত জামদানি শাড়ির ব্যবসায়ীরা। তাঁতীদের কাছ থেকে তারা শাড়ি কিনে বাইরে রপ্তানি করে থাকেন। প্রতিবছর জামদানিপল্লি থেকে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ইসলামাবাদ, করাচী, লাহোর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছরই হয় জামদানি মেলা। এবছর রপ্তানিও বন্ধ রয়েছে।

জামদানি শাড়ি বিক্রিকে ঘিরে শীতলক্ষ্যার পাশে ডেমরায় ও নোয়াপাড়া জামদানিপল্লিতে গড়ে ওঠেছে জামদানির আড়ং। এ আড়ংয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার জামদানির হাট বসতো। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ও ব্যবসায়ীরা আসতেন এখানে জামদানি শাড়ি কিনতে। প্রায় দুই শতাধিক পাইকার বিভিন্ন ধরনের জামদানি কিনে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে আসছেন। দুই হাটে প্রতি মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি বেচা-কেনা হতো বলে জানান বিক্রেতারা।

কলামিস্ট ও গবেষক মীর আব্দুল বাংলানিউজকে জানান, জামদানি তাঁতীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।