ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা মোকাবিলায় তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
করোনা মোকাবিলায় তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর আহ্বান

ঢাকা: অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হওয়ায় তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা।

সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তামাক পণ্যের দাম বাড়ালে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে, যা সরকার কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে ৬ লাখ ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে।

প্রায় ২০ লাখ ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে।  একইসঙ্গে করোনার মতো যেকোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

তামাক কর ও দাম বাড়ানোর দাবিতে রোববার (১৭ মে) প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন এসিডি, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ইপসা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এবং বিটা ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরে। বেসরকারি তামাকবিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা জানি যে কোনোভাবে তামাক সেবন স্বাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এ কোভিড-১৯ মহামারি আবারও বুঝিয়ে দিল সুস্থ থাকার জন্য তামাক পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক ব্যবহারের ক্ষতির শিকার বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে। করোনার অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সুস্থ সমাজ গঠন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তামাকমুক্ত জাতীয় পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। তাই আসন্ন বাজেটে সব তামাক পণ্যের কর ও দাম বাড়িয়ে তরুণ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করছি।

বাজেট প্রস্তাবে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান এবং একইসঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে (নিম্ন এবং প্রিমিয়াম) নামিয়ে আনা। বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া: ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ দশমিক ৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।  ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৫ দশমিক ৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা ইত্যাদি।

তামাক-কর ও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এছাড়া ৩ শতাংশ সারচার্জ থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব হবে। অতিরিক্ত এ অর্থ সরকার তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস, করোনা মহামারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ৬ লাখ বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে। প্রায় ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে করোনার মতো যেকোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
টিআর/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।