ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দুর্যোগকবলিত চিংড়িখাতে জরুরি সাহায্য প্রয়োজন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২০
দুর্যোগকবলিত চিংড়িখাতে জরুরি সাহায্য প্রয়োজন

ঢাকা: বাংলাদেশের দেশজ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়যোগ্য পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চিংড়িখাত বর্তমানে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে গত ২ বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের (বিএসএফএফ) কার্যনির্বাহী বোর্ডের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সভায় চিংড়িখাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত সংকট পরিস্থিতির স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও সম্ভাব্য করণীয় বিষয়গুলো সম্মন্ধে পর্যালোচনা করা হয়।

বিএসএফএফ বাংলাদেশের চিংড়ি ও মৎস্যখাতের উন্নয়নের জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সরকার ও এ খাতের অন্যদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

তবে বিএসএফএফ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারণে এ খাত গুরুতর ক্ষতির ও ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের চিংড়িখাতও গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে চিংড়ি হ্যাচারিসমূহ এবং মাঠ পর্যায়ের চিংড়ি খামারিরা ও খামারে কার্যরত কর্মচারীরা নানাবিধ গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ সমস্যাগুলো এখনই মোকাবিলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে একদিকে যেমন হ্যাচারি পর্যায়ে পিএল উৎপাদন ব্যাহত হবে, অন্যদিকে পিএলের অভাবে খামার পর্যায়ে উৎপাদন হ্রাস পাবে। চিংড়ি উৎপাদন হ্রাস পেলে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসমূহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাবে না। ফলশ্রুতিতে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ ও রপ্তানি আয় কমে যাবে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে এ খাতের কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।  

এ প্রসঙ্গে চিংড়িখাতের হ্যাচারিগুলো থেকেও জানা গেছে যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চিংড়ি পোনা উৎপাদন ও বিপণন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত সমস্যার প্রেক্ষাপটে চিংড়ি খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি ও বিপণনে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অতিসত্তর আমদানি ত্বরান্বিত করা না গেলে এবং তার প্রয়োজনীয় দ্রুত বিপণনের মাধ্যমে খামারি পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারলে বাংলাদেশের চিংড়িখাত গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হবে। যা এ খাতের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। অতিসত্তর সরকারি পর্যায়ে এ সমস্যাগুলো সমাধানে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

কোভিড-১৯ উদ্ভূত সমস্যা ছাড়াও সাম্প্রতিক ঝড় আম্ফানের কারণেও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়িখাত ও চিংড়ি খামারিরা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এ এলাকার চিংড়ি ঘের ও খামারগুলোর বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে খামারিদের প্রস্তুতকৃত ঘের ও পুকুরগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামারিদের বিনিয়োগ ও উৎপাদন অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের এখনই জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের চিংড়িখাত যেসব সমস্যাসমূহ সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বিএসএফএফের নির্বাহী বোর্ড কোভিড-১৯ উদ্ভূত সংকটসমূহের উত্তরণে সরকার যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে, বিশেষত অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেগুলোর প্রশংসা করেছে। বিএসএফএফের নির্বাহী বোর্ড চিংড়িখাতের চলমান সমস্যসমূহ কাটিয়ে উঠতে সরকারের আরও বিস্তৃত সহায়তা দেওয়া ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

বিএসএফএফ এ সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য সরকার ও অন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।  

বিএসএফএফ মনে করে যে, অতিসত্তর চিংড়িখাতের বর্তমান সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে চিংড়িখাতের ক্ষতির প্রকৃতি ও ব্যাপকতা নিরুপণ করে চিংড়ি খামার ও হ্যাচারিগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিএসএফএফের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষ করে চিংড়িখাতের খামারি ও হ্যাচারিগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ ও অন্য উপকরণ সরবরাহের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজনীয় বলে বিএসএফএফ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছে। চিংড়ি খাদ্য ও অন্য উৎপাদন উপকরণ আমদানি ও বিপণন ত্বরান্বিত ও সহজিকরণের জন্য, প্রয়োজন হলে বিকল্প উৎস থেকে এসব উপকরণ আমদানির আশু ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিএসএফএফ সনির্বন্ধ আবেদন জানাচ্ছে।

বাংলাদেশে আমদানির জন্য ব্যবহৃত বন্দরসমূহে শুল্ক ছাড়পত্র সহজিকরণের জন্য বিএসএফএফের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হচ্ছে। বিএসএফএফ আগামী (অর্থবছর ২০২০-২০২১) বাজেটে চিংড়িখাত বান্ধব শুল্কনীতি গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছে। চিংড়িখাতের ভবিষ্যত মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য বিএসএফএফ বিনিয়োগবান্ধব বিশেষ পদক্ষেপ ও প্রণোদনা এবং বাংলাদেশের চিংড়ির জন্য বর্তমান ও বিকল্প বাজারগুলোতে চিংড়ি রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছে।

বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক। সভায় বিএসএফএফের পরিচালকদের মধ্যে এমএম ইস্পাহানী গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান ইস্পাহানী, বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. সুলতান হাফিজ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হুসেন, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত শফি ইউ আহমেদ, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেঘনা ব্যাংক লিমিটিডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন, বিশ্বব্যাংকের দক্ষণ এশিয়া কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন (সাসার্ড) বিভাগের সাবেক সিনিয়র সেক্টর অপারেশনাল অফিসার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) অপারেশনস ডিরেক্টর ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সেক্টর ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট ড. জিএম খুরশিদ আলম, প্রাগ্রশোর (একটি লিঙ্গ ও নারীবাদী প্রশিক্ষণ ও সংস্থান কেন্দ্র) এর সম্মানিত নির্বাহী পরিচালক মিসেস ফউজিয়া খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
পিআর/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।