ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাড়ছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা, সঙ্গে সুদের চাপ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
বাড়ছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা, সঙ্গে সুদের চাপ ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক অর্থায়ন বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, যা গত বাজেটের চেয়ে ২৫ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা বেশি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের বোঝা বেড়েছে। ঋণের বোঝা বৃদ্ধির সঙ্গে সুদ পরিশোধের চাপও বেড়েছে।

দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। তবে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণেই বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দিতে দ্বিধাবোধ করছে না বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

ইআরডি জানায়, বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বৈদেশিক অর্থায়ন ৯২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঋণ ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। গত বাজেটের যা ছিল ৬৩ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান চার হাজার ১৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন সহযোগীরা খাদ্যে ৬১৩ কোটি ও প্রকল্প সাহায্যে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান দেবে।

২০১৮-১৯ সালে বাজেটে মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল মাত্র ৪৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে বাজেটে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে।

২০২০-২১ সালে বাজেটে বৈদেশিক ঋণে সুদ পরিশোধের টার্গেট পাঁচ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধের টার্গেট ছিল চার হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বৈদেশিক সুদ পরিশোধের টার্গেট ছিল মাত্র তিন হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে দুই হাজার ১০২ কোটি টাকা অতিরিক্ত বৈদেশিক সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে।

মূলত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা), সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), চায়না এক্সিম ব্যাংক, ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ (আইডিবি) অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ পরিশোধ করতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বৈদেশিক ঋণের ডেট স্টক ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এসব ঋণ দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। কোনো কোনো ঋণের বয়স ৩০-৪০ বছর।

ইআরডি সূত্র জানায়, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ক্রেডিট রেটিংও ভালো।

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস, মুডিস এবং ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। যাকে ‘স্ট্যাবল ইকোনমি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থাগুলো। কোনো দেশকে ঋণ দেওয়া কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ তারই মূল্যায়ন ক্রেডিট রেটিং।

ইআরডি জানায়, সামনে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। চীন আগামীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ২৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে। বর্তমানে ঋণের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ সুদহারে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মূলত এসব কারণে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ, বাড়ছে সুদ পরিশোধের চাপ। উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বৈদেশিক সুদ পরিশোধের চাপ।

ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ফাবা) ড. পিয়ার মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বৈদেশিক ঋণ একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কয়েকগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কখনো ডিফল্ডার হয়নি। ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দেওয়ার জন্য আগ্রহী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
এমআইএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।