ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মহাবিপর্যয়ের মুখে খুলনাঞ্চলের ‘সাদা সোনা’ চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
মহাবিপর্যয়ের মুখে খুলনাঞ্চলের ‘সাদা সোনা’ চাষিরা

খুলনা: সুপার সাইক্লোন আম্পানের কালো থাবায় খুলনাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে হাজার হাজার মাছের ঘের। ঝড়ের দিনে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। পাশপাশি ব্যাপকভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছের ঘের ডুবে সব মাছ বের হয়ে গেছে। বাগদা ও গলদা চিংড়ি, কার্প জাতীয় মাছ (সাদা মাছ), কাঁকড়া, কুচিয়া পানির তোরে ভেসে গেছে।

ঝড়ের কারণে খুলনা বিভাগের ৬টি জেলা তথা খুলনা, বাগরেহাট, সাতক্ষীরা, মাগুড়া, ঝিনাইদহ ও চূয়াডাঙ্গায় ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে থাকা মাছের ঘের, পুকুর ও দীঘির মাছ লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন খুলনাঞ্চলের ‘সাদা সোনা’ খ্যাত বাগদা চাষিরা।

চিংড়ি চাষি ও ঘের মালিকরা জানান, গত কয়েক বছর যাবৎ ভাইরাস ও মড়ক লেগে বাগদা চিংড়ি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকে বিগত বছরগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর চিংড়ি চাষ শুরু করেন। প্রথমেই পোনা সঙ্কট ছিল। এর পর পানি সঙ্কট। তারপর চলতি বছরের শুরুতে কভিড-১৯- এর কারণে চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানসৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছ। এতে মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা।

তারা আরও জানান, করোনার আগে রফতানি আদেশ পাওয়া গেরেও করোনা শুরুর পর থেকে তা আর নেই। অনেক ক্রেতাই আদেশ বাতিল করেছেন। করোনা ও আম্পানের আঘাতে সব স্বপ্নই ধূলিসাৎ হয়েছে।

খুলনার কয়রার ঘাটাখালী এলাকার তৈয়ব আলী বলেন, আমার ৪০ বিঘার দুটি বাগদার ঘেরে আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। এতে সব মাছ নদীতে ভেসে গেছে।

তিনি জানান, বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় তার মতো এ উপজেলার শত শত চিংড়ি চাষির ঘের, পুকুর ও দীঘি সব একাকার হয়ে গেছে।

বাগেরহাট জেলার মোংলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা গ্রামের ঘের মালিক বিজন বৈদ্য বলেন, এখন চলছে বাগদা মৌসুম। অনেক কষ্ট করে অধিক দাম দিয়ে এবার পোনা কিনতে হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আর মহামারির কারণে লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ উৎপাদন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, ঝড়ের দিন অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সব মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমরা আর্থিক সহযোগিতার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে পথে বসতে হবে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা জেলেখালী এলাকার চিংড়ি ঘের মালিক আব্দুল আজিজ শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে নদীর পানির তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বাগদা চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। আমার ২০০ বিঘার চিংড়িঘের করতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চার কোটি টাকা করেছিলাম। আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে এক দিনেই সব শেষ।

আজিজের মতো সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির হাজার হাজার বাগদা চাষী ও ঘের মালিকের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে চিংড়ি ঘেরগুলো ভেসে গেছে। ফলে তারা এখন প্রায় নিঃস্ব।  

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এইচ. এম বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগরেহাট, সাতক্ষীরা, মাগুড়া, ঝিনাইদহ ও চূয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি ঘের, পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। এতে ২২ হাজার ৩৩৩ জন চাষির মাছ ভেসে গেছে। আয়তনের দিক দিয়ে ২৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর ঘের ও পুকুর। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৬২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাতক্ষীরার চিংড়ি চাষিরা।

তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও ঘের মালিকদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি তাদের সহযোগিতা করে তাহলে তারা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
এমআরএম/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।