ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আশার আলো পুঁজিবাজারে

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
আশার আলো পুঁজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: দীর্ঘ মন্দার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। তারল্য ও আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ, শর্তহীন অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ এবং সর্বোপরি নতুন কমিশনের দৃঢ় অবস্থানের কারণে পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরাসহ সংশ্লিষ্টরা।  

স্টেকহোল্ডার, অর্থনীতিবীদ ও বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

এদিকে, চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাপক পতন দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। এরপর মার্চে এসে যুক্ত হয় করোনা মহামারি। এই অবস্থায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে বড় পতন দেখা দেয়। আগের কমিশন ১৮ মার্চ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেন। এরপরও পতন ঠেকানো না গেলে পুঁজিবাজার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে এপ্রিলে খায়রুল কমিশন বিদায় নিলে, মে মাসে চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়।

দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা যা করা দরকার তিনি তাই করবেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টেকহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ৩১ মে পুনরায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু হয়। শুধু তাই নয়, গত তিন মাসে ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে বাধ্যবাধকতা এবং ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনাসহ বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। অনিয়ম দূর করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোকেই বেশি শুরুত্ব দেয় কমিশন, যা বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে বাজারে ফিরতে শুরু করে। এতে করে বাজার ঘুঁড়ে দাঁড়ায়।

এ ব্যাপারে সাধারণ বিনিয়োগকারী চয়ন বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সালে আমি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করি। বিনিয়োগ করেই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ি। পুঁজির দুইভাগ চলে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমি বাজার ছেড়ে যাইনি। ধীরে ধীরে গত ১০ বছরে আমার পুঁজি না ফিরলেও এই করোনাকালে পুঁজি ফিরে লাভের মুখ দেখেছি।  

তিনি বলেন, পুঁজি ফেরা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম কিন্তু বর্তমান কমিশন সাহসী পদক্ষেপের কারণে নতুন করে বিনিয়োগ করেছি এবং গত দুই মাসে শেয়ার থেকে ভালো মুনাফা পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, কমিশন পরিচালকদের শেয়ার ধারণের জন্য আল্টিমেটাম দেওয়ায় তারা শেয়ার কিনছেন। এতে করে শেয়ারের চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে, আমরাও লাভবান হচ্ছি। আমাদের দীর্ঘদিনের আস্থার সংকট কাটতে শুরু করেছে আমরা নতুন করে আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছি।

শুধু তাই নয় বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ায় পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সম্প্রতি তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ইম্প্যাক্ট পুঁজিবাজারে পড়েছে। এতে করে পুঁজিবাজারে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে।  

অপরদিকে, গত সপ্তাহে (২৩-২৭ আগস্ট) পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে নতুন কমিশনের সাহসী পদক্ষেপের কারণে পুজিবাজার ঘুঁরে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন বাজারে তারল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, শেয়ারের দাম কমে গেলে বাজারমূলধন কমে গিয়েছিল। তেমনি শেয়ারের দাম বাড়ায় বাজারমূলধন বেড়েছে। এটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে করোনাকালে সূচকের টানা উত্থান নতুন কমিশনের শক্তিশালী পদক্ষেপ কারণে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।  

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা আস্থা সঙ্কটে ভুগছিলেন। বিএসইসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন একাধিক সাহসী পদক্ষেপ বিশেষ করে ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, বড় কোম্পানিকে জরিমানা এবং পরিচালকদের শেয়ার ধারণের সময় বেঁধে দেওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এতে করে বাজার ইতিবাচক হতে শুরু করেছে।

বাজারে সূচকের উত্থান ও মূলধন বাড়াকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, টানা এক দশক বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করেছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল না। এক দশক অস্থিরতার পর এরকম উত্থান স্বাভাবিক। শুধু তাই নয় নতুন কমিশনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরায় বাজারে তারল্য সংকট কেটে গেছে বলেও মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত এক দশক খাইরুল কমিশন অনেক পদক্ষেপ নিলেও সেটির আলোর মুখ দেখেনি। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। কিন্তু নতুন কমিশনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে  নতুন আশায় বাজারে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের আশা একটাই বাজার উত্থান-পতনে কোন চক্র যাতে কারসাজি করতে না পারে সেটি ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে কমিশন এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা ১৮ হাজার ৮৪২ কোটি ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৯ হাজার ৮৬৬ কোটি ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা বা ২.৭৪ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৯.১১ পয়েন্ট বা ১.৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৩.১৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩০.২৭ পয়েন্ট বা ২.৭৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪৩.০৩ পয়েন্ট বা ২.৬১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৩০.৬১ পয়েন্টে এবং ১৬৯০.১০ পয়েন্টে।

অপরদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাজার মূলধন ৮ হাজার ৯৭৬ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৮৯২ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৬.৩৮ পয়েন্ট বা ১.২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৭৩.০২ পয়েন্টে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
এসএমএকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।