ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্রেতা-দর্শনার্থীর আনাগোনায় মুখরিত জুয়েলারি এক্সপো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
ক্রেতা-দর্শনার্থীর আনাগোনায় মুখরিত জুয়েলারি এক্সপো জুয়েলারি এক্সপো

ঢাকা: দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো মুখর হয়ে উঠেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে। সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে জুয়েলারি এক্সপোতে প্রবেশ করতে দেখা যায় তাদের।

এদের অনেকেই যেমন বিভিন্ন ছাড়ে কিনেছেন নিজের পছন্দের গহনাটি, ঠিক তেমনি ঘুরে দেখেছেনও অনেকে।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) ছুটির দিন থাকায় সকল থেকে এই এক্সপোতে ছুটে আসেন রাজধানীবাসী। জুমার নামাজের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) প্রাঙ্গণ। এদিন সকাল থেকে বিকিকিনিও হয়েছে বেশ, খুশি বিক্রেতারাও।

সকালে দর্শনার্থীদের জন্য এক্সপোর গেট খুলে দেওয়া হয় সকাল ১০টায়। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা। দুপুর ১২টার মধ্যে প্রায় ভরে যায় পুরো প্রাঙ্গণ। জুমার নামাজের পর নেমে আসে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল।

গহনার এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিনে যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয় জুয়েলারি এক্সপো। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসেন এক্সপোতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও দলবেঁধে চলে আসেন। নানা বয়সী আর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন।

এদিকে এই বিশেষ এই প্রদর্শনী উপলক্ষে সোনা এবং হীরার অলংকারসহ বিভিন্ন গহনায় বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে অধিকাংশ স্বর্ণের গহনায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে মজুরি। আর ডায়মন্ড কালেশনে ২৫ থেকে ৪০ ভাগ ছাড় দেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন বিক্রেতেরা।

এ বিষয়ে চৌধুরী গোল্ডের (যশোর) মো. রাজন বলেন, আমরা স্বর্ণের গহনায় মজুরি ছাড় দিচ্ছি। সাধারণত এক ভরির গহনায় মজুরি খরচ আসে প্রায় ৬ হাজার টাকা। সেদিক থেকে কেউ যদি তিন বা চার ভরির একটি অলংকার নেন, তিনি প্রায় ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা ছাড় পাচ্ছেন। আর স্বর্ণের দাম কমানোর তেমন কোনো উপায় তো নেই। আর ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যেভাবে আসছেন, দেখছেন, কিনছেন, তাতে বিক্রিতে আমাদের আশা পূরণ হয়েছে। আমরা তো মূলত প্রচারের জন্য এসেছি, তবুও বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।

প্রায় একই কথা জানান ডিমান্ড জুয়েলারির প্রতিনিধি মো. পলাশ। তিনি বলেন, এক্সপোতে বিক্রির তুলনায় প্রদর্শনীটাই মূলত প্রধান। সেদিক থেকে যেমন আমরা সন্তুষ্ট, ঠিক তেমনি ক্রেতাদেরও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে বড় গহনার তুলনায় ছোট অলংকারগুলোর বিক্রি বেশি। আর স্বর্ণের গহনায় যেমন আমাদের মজুরি খরচে ছাড় আছে, ঠিক তেমনি ৪০ ভাগ ছাড় দিচ্ছি ডায়মন্ড কালেকশনে।

এক্সপোতে ঘুরতে আসা জান্নাতুন নাঈম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় অফিস ও কাজের চাপ না থাকায় আজ ফ্রি ছিলাম। এমন সময় জানতে পারলাম যে আইসিসিবিতে জুয়েলারি এক্সপো চলছে। তাই চলে এলাম আমাদের দেশের গহনার কালেকশনগুলো দেখতে। আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি যে আমাদের দেশে এতো নান্দনিক ডিজাইনের অলংকার তৈরি হয়।  

নিজেদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব 'হোলি' পাশ কাটিয়ে ভারত থেকে এই জুয়েলারি এক্সপোতে এসেছেন কাঞ্চন জানা। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনেক দেশেই এমন জুয়েলারি এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছি। তবে বাংলাদেশের এই আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশের মানুষের হাতে তৈরি অলংকারগুলো অতুলনীয়। বিশ্বের অন্য কোথাও এমন নান্দনিক এবং অ্যান্টিক অলংকার পাওয়া কষ্টসাধ্য।

এদিকে জুয়েলারি এক্সপোতে আগত দর্শনার্থীরা এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে স্বর্ণ এবং ডায়মন্ড পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারছেন খুব সহজেই। দর্শনার্থীরা জুয়েলারি এক্সপোতে এসে জানতে পারবেন তাদের ব্যবহার করা ডায়মন্ড ন্যাচারাল নাকি ল্যাবরেটরি মেইড। আর স্বর্ণের গহনায় স্বর্ণ এবং অন্য ধাতুর পরিমাণ কতটুকু। আয়োজনে এই সুবিধা দিচ্ছে ডায়মন্ড পরীক্ষার বুথ এসজিএল এবং স্বর্ণ পরীক্ষার বুথ ফিশার। এগুলো থেকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে ক্রেতারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন তাদের পণ্যটি।

বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক বলেন, আয়োজনে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছে তারা সন্টুষ্ট। আর আমাদের যে শিল্পকর্ম, আমাদের দেশের কারিগররা যে এতো দারুণ অলংকার তৈরি করতে পারেন, সেটিকে ছড়িয়ে দেওয়া এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। দেশের বাইরে থেকেও অনেকেই এসেছেন এই এক্সপোতে। তারা নিজেরাও আমাদের বিভিন্ন গহনা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমরা যে এতো ঐতিহ্যবাহী গহনা তৈরি করি, এগুলো বিশ্ব জানেই না। এখন তারা জানছে এবং আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকার যদি এখন একটু সাহায্য করে, তাহলে এই ক্ষেত্রটি আরও বড় হতে পারে।

মেলা ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য ২৫ লাখ টাকার নানা আকর্ষণীয় পুরস্কার রাখা হয়েছে। র্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে এই ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার হিসেবে একজন পাবেন ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা পাবেন একজন। এ ছাড়া এক লাখ টাকা করে ১০ জন পাবেন পুরস্কার।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানায়, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুঃসাহসিক এক অভিযাত্রায় সহযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যোগ দিতে বাজুস এই প্রথম বাংলাদেশে জুয়েলারি এক্সপো-২০২২-এর আয়োজন করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২ 
এইচএমএস/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।