ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমদানিনির্ভর কসমেটিকস পণ্যের বাজার বদলে দিতে আসছে রিমার্ক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
আমদানিনির্ভর কসমেটিকস পণ্যের বাজার বদলে দিতে আসছে রিমার্ক

ঢাকা: বিশ্বমানের মানসম্মত কসমেটিকস পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে দেশের একমাত্র পরিপূর্ণ কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি ও স্কিন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড।  

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যতম সেরা কসমেটিকস ও স্কিন রিসার্চ সেন্টার হিসেবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য।

রিমার্ক এল এল সি, ইউ এস এ’র এফিলিয়েটেড সংস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিকমানের পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউরোপ-আমেরিকার স্বনামধন্য প্রোডাক্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সংস্থায় আর এন ডি বা গবেষণায় বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার বহুল প্রচলিত কসমেটিকস পণ্যগুলো গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের আবহাওয়া, মানুষের স্কিনের ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করা হচ্ছে।

অভিজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্ট ও ট্রেইনার সালেহা সারওয়ার জানান, দেশীয় বাজারে মানহীন কসমেটিকস পণ্যের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে কালার কসমেটিকসের এত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোনো মানসম্মত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখানে নেই, যা সত্যিই খুব দুঃখের বিষয়।  

মূলত দেশীয় বাজারে মানহীন কসমেটিকস পণ্যের কারণে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে আমদানিনির্ভর এ শিল্পে বছরের পর বছর ধরে চলছে শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার মহোৎসব, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সরকার ও জনগণ। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রিমার্কের এ উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবিদার।  

দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর এর মতে, দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি আয়ের উৎস রেডিমেট গার্মেন্টস হলেও এ খাতটির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা আবশ্যক। উন্নত টেকনোলজি নির্ভর শিল্পখাতে জোর দিতে হবে যেমন- কেমিক্যাল, আইটি, ইলেক্ট্রনিক্স ও কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি।  

প্রাসঙ্গিকভাবে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের একপোর্ট ভলিয়্যুম ১ বিলিয়ন ডলার থাকলেও ২০২১ সালে বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে আয় করেছে ৪৪.২২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় প্রায় ৩৩৬ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান মাত্র শতকরা ১৬-১৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে ভিয়েতনাম নিজেদের রপ্তানিযোগ্য শিল্পখাতে বৈচিত্র নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।  

এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রপ্তানি শিল্পে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। রিমার্কের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।

রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স শরীফ মোহাম্মদ আলী সুমন জানান, প্রতিবছর দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কসমেটিকস পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। রিমার্কের এ উদ্যোগের ফলে আমদানিনির্ভর এ শিল্পটি একটি রপ্তানিযোগ্য শিল্প খাতে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় অবদান রাখতে যাচ্ছে। আমেরিকান টেকনোলজির সাহায্যে দেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের পণ্য, দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হবে সারা বিশ্বে।  

ধারণা করা হচ্ছে, মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় একশ একর অকৃষিযোগ্য পরিত্যক্ত জমিকে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের উপযোগী করে ব্যবহারের মাধ্যমে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের পরিকল্পিত কারখানা নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এখানে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী। এছাড়াও পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি।

এ কারখানায় ৪০টি ব্র্যান্ডের কালার কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার, হোম কেয়ার ও পারসোনাল কেয়ারের প্রায় ৪০০-৫০০ পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জানা যায়, কসমেটিক পণ্যের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং কম্পোন্যান্ট নিয়েও প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছে ব্যাপক গবেষণা। এ আমদানিনির্ভর কসমেটিকস পণ্যের খাতটিকে একটি রপ্তানিযোগ্য শিল্পখাতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড। একদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে দেশে আসবে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি আয়, একইসঙ্গে দেশীয় ভোক্তারা পেতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিকমানের পণ্য।  

বাংলাদেশের বাজারে কসমেটিকস খাতে এ ধরনের বিনিয়োগ এর আগে আর কখনো হয়নি। তাই এ কথা বলা বাহুল্য না যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম কসমেটিকস ইন্ডান্ট্রি হাব-এ পরিণত হতে যাচ্ছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড।  

রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়ার বলেন, আমরা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরির লক্ষ্যে সব ধরনের মানদণ্ড অব্যাহত রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথ ছাড়পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিল্পায়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা আশা করছি এ মহৎ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণসহ বাংলাদেশ সরকার আমাদের পাশে থাকবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর মাধ্যমে স্থানীয় ও দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার যে প্রকল্প আমরা শুরু করেছি তা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।  

বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।