ঢাকা: আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে লটারির মাধ্যমে প্রথম ধাপে স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দিনের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিনের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ডিজিটাল লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল শিট (অপেক্ষমাণ তালিকাসহ) এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলাফল শিটের প্রথম তালিকা অনুযায়ী আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। এরপর আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি শুরু করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রথম তালিকা থেকে ভর্তির পরবর্তী চার কর্মদিবস প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে। তারপরের তিনদিনে দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমিক নম্বর অনুসারে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে।
শিক্ষার্থী যাচাই যেভাবে
কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারির আওতাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের https://gsa.teletalk.com.bd লিংকে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানের User ID ও Password দিয়ে Login করে ডাউনলোড অপশনে Click করতে হবে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানে কারা আবেদন করেছিল, সেই তালিকা পাওয়া যাবে।
ডিজিটাল লটারিতে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত প্রথম তালিকা এবং প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকার শিক্ষার্থীদের আবেদন সংক্রান্ত তথ্য এ লিংক থেকে যাচাই করতে পারবেন। লিংকে তথ্যাদি টাইপ করে Submit করলে আবেদনকারী কতবার আবেদন করেছে, তাও জানা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো আবেদনকারী তথ্য পরিবর্তন করে একাধিকবার আবেদন করে থাকলে ডিজিটাল লটারিতে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে নির্বাচিতদের তালিকা প্রদর্শন করবেন।
ভর্তির জন্য কাগজপত্র
নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র যাচাইকালীন শিক্ষার্থীর জন্মসনদের মূলকপি, জন্মসনদের অনলাইন কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাই করতে হবে)। বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মূলকপি ভালো করে দেখতে হবে।
মিথ্যে তথ্য দিলে বাদ পড়বেন নির্বাচিতরা
ভর্তির সময়ে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকলে (যাচাই সাপেক্ষে) তাকে ভর্তি করা যাবে না।
কোটার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম প্রযোজ্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ জারিকৃত ভর্তি নীতিমালায় যেসব কোটা সংরক্ষিত রয়েছে, ভর্তির সময়ে ওই কোটাগুলোতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কোটা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া অন্যান্য কোটায় শূন্য আসন পূরণ না হলে সাধারণ নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অপেক্ষমাণ তালিকার ক্রমানুসারে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে। কোনোভাবেই আসন শূন্য রাখা যাবে না।
মাউশির নির্দেশনা অনুসরণ না করে বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান দায়ী থাকবেন বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সকালে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
লটারির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল ইসলাম চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীরা কে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে তা অনলাইনে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সুযোগে সমতা তৈরি হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যারা নামিদামি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতো না তারা ভর্তি হতে পারছে। কাজেই একটা সুযোগের সমতা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসনের বিপরীতে দ্বৈচয়নের ভিত্তিতে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদান পেয়ে দক্ষতা, যোগ্যতা ও জ্ঞান অর্জন করবে। এ দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আমরা তথাকথিত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি, তারা রেডিমেড শিক্ষার্থী নেবে আর ভালো ফলাফল করবে তাহলে শিক্ষকদের কাজটা কী? তাহলে কেন তাদের আমরা অবকাঠামো দেবো? কেন এমপিও দেবো?
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওয়েবসাইট এবং এসএমএসের মধ্যে ফল জানতে পারবেন। ওয়েবসাইটে httpsgsa.teletalk.com.bd-এ প্রবেশ করে ফলাফল দেখা যাবে।
এসএমএসের মাধ্যমে ফল পেতে GSA লিখে স্পেস দিয়ে Result লিখে স্পেস দিয়ে User ID লিখে ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে শিক্ষার্থী জেনে যাবে, সে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত ২৪ অক্টোবর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় লটারির অধীনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ৩ হাজার ৮৪৬ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলোয় শূন্য আসন ১১ লাখ ২২ হাজার ৯৪টি। এর বিপরীতে ভর্তির জন্য আবেদন জমা পড়ে আট লাখ ৭৩ হাজার ৭৯২টি।
দেশের ৬৫৮টি সরকারি বিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ১০১টি। এর বিপরীতে আবেদন জমা হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩ জন শিক্ষার্থী। প্রতি আসনে পাঁচ জন করে শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।
বেসরকারি ৩১৮৮টি বিদ্যালয়ে শূন্য আসন ১০ লাখ তিন হাজার ৯৯৩টি। এর বিপরীতে আবেদন করেছে তিন লাখ ১০ হাজার ৭৭৯ জন।
লটারির ফলাফল ই-মেইলে স্কুলপ্রধানদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে মাউশি। আর শিক্ষার্থীরা কে, কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, সেটা আবেদনের সময় তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মনোনীত সবাই এসএমএস পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস