বরিশাল: মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেলেও অর্থ সংকটের কারণে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা বরিশালের উজিরপুরের শিক্ষার্থী রমজান খান সাব্বিরের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শহিদুল ইসলাম। ওই ছাত্রকে মেডিকেলে ভর্তির ফি বাবদ নগদ ২৫ হাজার টাকা ও বই দিয়েছেন তিনি।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে এ সংক্রান্ত সংবাদ দেখে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাব্বিরের হাতে আর্থিক সহায়তা ও মেডিকেলের বই তুলে দেন জেলা প্রশাসক।
এর আগে সাব্বিরকে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেন ২১ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন।
জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রমজান খান সাব্বির একজন অদম্য মেধাবী ছাত্র। কোনো প্রতিকূলতাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অর্থাভাবে মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে জেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে তার মেডিকেল কলেজে পড়াকালে সহায়তার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে। সাব্বির আমাদের সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হার না মেনে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করেছে। সাব্বিরের মত যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী অর্থের অভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে না, তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহায়তা দেওয়া। ’
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে অর্থের অভাবে দুচিন্তায় থাকা রমজান খান সাব্বিরকে ভর্তির ফির জন্য ২১ হাজার টাকা দেন। ভর্তির পর যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে ফোন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনিও সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন।
ইউএনও আরও জানান, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক তার বন্ধু। তারাও সাব্বিরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে সব সময় সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের দমোদরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ খানের ছেলে সাব্বির। তার বাবা একজন কৃষি শ্রমিক। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণভাবে গামছা বিক্রি করে চার সদস্যর সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন ফিরোজ খান। তার মেধাবী ছেলে সাব্বির মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ৬৭.৭৫ নম্বর পেয়ে মেধাক্রমে ৪৭৪১ হয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। যেখানে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ছেলেকে ভর্তি নিয়ে দুচিন্তায় পড়েন ফিরোজ খান।
প্রতিবেশী বয়োবৃদ্ধ আনোয়ারা বেগম বলেন, দুই ভাই-বোন সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকে। অভাব-অনটনের মধ্যে কোনো রকম খেয়ে পড়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। নিজে নিজে পড়াশোনা করে ডাক্তারি পড়তে সুযোগ পেয়েছে।
শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রাইভেট পড়ার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। পরীক্ষার কোনো বইও কিনতে পারেননি। বোনের উপহার পাওয়া ডিজিটাল শুমারির ট্যাব দিয়ে অনলাইন ও ইউটিউব থেকে দেখে পড়াশোনা করেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষায় ৬৭.৭৫ নম্বর পেয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।
ছোটবেলা থেকে মেধা ও পরিশ্রমকে সঙ্গে নিয়ে অভাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সাব্বির বলেন, বাবা সব সময় বলছেন যত কষ্ট হোক স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবেন। বাবার এ আশ্বাসে নবম শ্রেণিতে যখন বিজ্ঞান বিভাগ নেই, তখন থেকেই লক্ষ্য ঠিক করি চিকিৎসক হব।
তিনি জানান, সেই লক্ষ্য পূরণে উজিরপুরের এইচএম ইনস্টিটিউট থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরে ভর্তি হন সরকারি গৌরনদী কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ ৫।
সাব্বিরের বাবা ফিরোজ খান বলেন, আল্লাহর রহমতে সাব্বির পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কীভাবে ছেলেকে ভর্তি করব আর পড়ালেখার খরচ বহন নিয়েও চিন্তায় ছিলাম। আর সেই চিন্তা থেকে প্রয়োজনে ঋণ করে হলেও ছেলেকে ভর্তি করানোর কথা ভাবছিলাম। আর তখনই ইউএনও ও জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের দিকে সদয় হন।
এসময় তিনি বাংলানিউজসহ যেসব গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ প্রকাশ করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
এমএস/এইচএ/