ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীম উদ্দীন হলের ক্যান্টিন থেকে সংঘবদ্ধভাবে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে।
গত সপ্তাহে ক্যান্টিন মালিক নাসিরুদ্দিনকে হল সংসদে ডেকে নিয়ে এই চাঁদা দাবি করেন হল শাখার অন্তত ১০ পদপ্রত্যাশী।
অভিযুক্ত নেতারা হলেন - ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক তানভীর হোসেন তুষার, ঢাবি শাখার নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইরতাজুল হক রিয়ান, জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশিকুর আশিক, সাংগঠনিক সম্পাদক রাইদুল খান কৌশিক, সহ-সভাপতি তাফসির মাহমুদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি শাহ সুলতান অপু। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
একাধিক হাউজ টিউটর, হল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তথ্য মতে, গত সপ্তাহের এক রাতে ৪টার দিকে নেতারা হল ক্যান্টিনের মালিক নাসিরুদ্দিনকে সংসদে ডেকে পাঠান। এসময় হলের পদপ্রত্যাশী অন্তত ১০জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। ক্যান্টিন চালাতে হলে তাদেরকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে দাবি জানান।
সূত্র জানায়, টাকা না দিলে এখানে ব্যবসা করতে দেবে না বলে মালিককে হুমকিও দেন এই নেতারা। খাবারে নোংরা মিশিয়ে শিক্ষার্থীদেরে ক্ষেপিয়ে তোলার হুমকিও দেন তারা।
গত এক সপ্তাহ যাবত টাকা আদায় করতে না পেরে শেষে গতকাল (শুক্রবার) এই নেতারা ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনার সমাপ্তি টানতে চান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তার ভয়ে ক্যান্টিন মালিক নাসিরুদ্দিন কথা বলতে রাজি হননি। গতকাল থেকে তার মোবাইলফোন বন্ধ রয়েছে। গতকাল থেকে তাকে হলে দেখা যায়নি।
নাম না প্রকাশের শর্তে ছাত্রলীগের হল শাখার এক ঊর্ধ্বতন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, হলের ক্যান্ডিডেটরা মিলে গত একসপ্তাহ যাবত ক্যান্টিন মালিক থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের কথা হচ্ছে, সামনে তো ঈদ; কিছু টাকা প্রয়োজন। সামান্য টাকার জন্য নিজের হলের মধ্যে তারা এই নোংরা কাজটা করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবাই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত ইরতাজুল হক রিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এ ধরনের কোনো বিষয় জানি না। তবে কয়েকদিন আগে আমরা কয়েকজন খাবারের মানের বিষয়ে ক্যান্টিন মালিককে জিজ্ঞাসা করেছি। আমরা বলেছি, ‘আপনার খাবারের মান এত খারাপ, তাও বেশি দাম রাখেন কেন? এই রোজাতে আমরা দুইবার ক্যান্টিনের খাবারের মান যাচাই করেছি। এর কারণে ক্ষোভের বসে ক্যান্টিন মালিক অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে।
হল শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশিকুর আশিক বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সবসময় হলের খাবারের মান তদারকি করি। ফলে ক্যান্টিন মালিকের সঙ্গে প্রায়শই কথা হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এই অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে।
অভিযুক্ত শাহ সুলতান অপুও ঘটনা অস্বীকার করেন। অভিযুক্ত রাইদুল খান কৌশিকের মোবাইলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অভিযুক্ত তাফসীর মাহমুদের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বাংলানিউজকে বলেন, আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমি অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগে চাঁদাবাজির কোনো স্থান নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোনো নেতার কোনোরকম অপকর্মে জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান বাংলানিউজকে বলেন, যদি ঘটনা এমন হয়ে থাকে তাহলে তা খুব দুঃখজনক। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই, তাদের থেকে সহযোগিতা না পেলে আমরা কাজ করতে পারব না। আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখব।
তিনি বলেন, আগের ক্যান্টিন মালিক খাবার ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার সেই সামর্থ্য ছিল না। ফলে নতুন এই ব্যক্তির কাছে আমরা ক্যান্টিনের দায়িত্ব দিই। তার সময়ে খাবার বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৪
এসএএইচ