ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মেডিকেল ভর্তি: সংবাদ সম্মেলনে বসছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১২

ঢাকা: মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে বসতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন তিনি।



এদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অবস্থান করছে। তারা এখানে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

এর আগে গত সোমবার মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো তাদের বাণিজ্য সচল রাখার জন্য এ আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে।

মেডিকেল কোচিং সেন্টারগুলোর বেশির ভাগেরই মালিক জামায়াত-শিবির। সংশ্লিষ্ট মহল ধারণা করছে, তারাই এ আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে। এছাড়া জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তি হলে কোচিং ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উসকে দিচ্ছে। আন্দোলনে জামাত-শিবিরের কর্মীরা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে, ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের কাছে এসংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়েছে।

এদিকে, আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি হলে রেটিনা, সানরাইজ, প্রাইমেট, থ্রি ডক্টরস, রয়েল মেডিকেল কোচিংসহ সব কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই কোচিংগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই কোচিং সেন্টার-ই পরিচালনা করে জামায়াত-শিবির। বর্তমানে তারাই এ আন্দোলনের মূল ভূমিকায়। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ইতোমধ্যে নানা কৌশল হাতে নিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে মেডিকেল ও ডেন্টালে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের সব মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে মোট আট হাজার ৪৯৩টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা দুই হাজার ৮১১টি। আর ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন আছে চার হাজার ২৪৫টি। এছাড়া ৯টি পাবলিক ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে আসন আছে ৫৬৭টি। এসব কলেজে আগে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো।

জানা যায়, মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির সময় ‘প্রশ্নপ্রত্র’ ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। এই চক্রটি বিজি (বাংলাদেশ সরকার) প্রেসের কতিপয় অসাধু স্টাফের মাধ্যমে প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের চেষ্টা করে থাকে। যা গত বছরও দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলে। এ অবস্থায় সরকার এবার লিখিত পরীক্ষার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। আর এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে তেঁতে উঠেছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আর তাদের আন্দোলন উস্কে দিচ্ছে কোচিং সেন্টারের মালিকরা। তারা শিক্ষার্থীদের অর্থের যোগান দিয়ে আন্দোলন বেগবান করার অপচেষ্টা করেছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত এই আন্দোলটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে এই চক্র।  

মঙ্গলবার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে আন্দোলনে যোগ দেওয়া এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানায়, সে রেটিনার প্রধান শাখায় ভর্তি কোচিং করছে। এ সিদ্ধান্তের পর তাকে অফিস থেকে এসএমএস করে এ আন্দোলনে থাকতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্র জানায়, সে অনেক টাকা খরচ করে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে সানরাইজ কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন সরকারের এ সিদ্ধান্ত শুনে সে খুব হতবাক হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কোচিং ব্যাবসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই তারা আন্দোলন করছেন বলে জানা গেছে। আর তাদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তার কারণ হিসেবে জানা যায়, সরকারের এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়িত হয়ে যায় তবে যেকোন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ভর্তি পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। এতে করে তারাও তাদের ব্যাবসা করা থেকে বঞ্চিত হবে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, জামায়াত-শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টার ও নীতিভ্রষ্ট কোচিং ব্যবসায়ীদের ইন্ধনেই এই আন্দোলন। কারণ ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের দীর্ঘদিনের কোচিং বাণিজ্যও শেষ হয়ে যাবে।   শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ বাধাঁ দেয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘জিপিএ’র ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি, নি:সন্দেহে সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ। কারণ এর মাধ্যমে নীতিহীন কোচিং ব্যবসা বন্ধ হবে। তবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত মেধা যাচাই হবে কী না সে প্রশ্নটি থেকেই যায়’।

প্রসঙ্গত, রোববার এক সভার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক জানান, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য চলতি বছর থেকে আর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এখন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জিপিএর ভিত্তিতেই এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১২
এসএমএ/আইএ/সম্পাদনা: আহমেদ রাজু, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।