ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শনিবার খুলছে বুয়েট ও জাবি

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২
শনিবার খুলছে বুয়েট ও জাবি

ঢাকা: উপাচার্য অপসারণের দাবিতে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ অচলাবস্থা ও রমজানের ছুটির পর শনিবার খুলছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

এছাড়া আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আদালতের দেওয়া নির্দেশের আলোকে দু’এক দিনের মধ্যেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।

 

এদিকে অচলাবস্থা ও ছুটি শেষে শনিবার খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো। রোববার ধেকে শুরু হবে ক্লাস। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

ভর্তি পরীক্ষা ও ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অন্যদিকে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধন্ত নেওয়া হবে দু’এক দিনের মধ্যেই। এ লক্ষ্যে আগামী সোমবার আদালতের নির্দেশের আলোকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।

এর আগে গত ৭ আগস্ট  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয় ঈদুল ফিতরের পরই বুয়েটে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে।

সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে বুয়েটে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পিছিয়ে পড়েছে বুয়েট। এদিকে অচলাবস্থা থাকায় উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় আছেন ভর্তিচ্ছুরা। সেইসঙ্গে সেশন জটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা ।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বুয়েটে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে শিক্ষক নেতাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আদালতে যান এক অভিভাবক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ। আদালত আন্দোলন বন্ধের নির্দেশ দিলে প্রকাশ্য আন্দোলন বন্ধ করেন নেতারা।

দেড় মাস ধরে বুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে লাগাতার ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষক সমিতি। আন্দোলনের একপর্যায়ে রমজান ও ঈদের ছুটির কয়েকদিন এগিয়ে এনে গত ১০ জুলাই বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

নিজেদের দাবিতে শিক্ষক সমিতি একরোখা অবস্থান নিলে আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরেকটি অংশ মাঠে নামে। সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনে সব মহলের দাবি অগ্রাহ্য করে সমিতি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধনের উদ্যোগ নিলেও সমিতির বিরুদ্ধে তাতে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী।
 
বুয়েট অস্থিরতা নিরসন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য জন্য আদালতে রিট করেন এক অভিভাবক ও আইনজীবী। এরপর চলমান আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট।

এছাড়া বুয়েটে চলমান আন্দোলন, ধর্মঘট কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা- জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। রুল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বুয়েট ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অবস্থা বেগদিক দেখে আন্দোলন স্থগিত করেন সমিতির নেতারা।

শনিবার ক্যাম্পাস খোলার পর আদালতের নির্দেশের আলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম শুক্রবার দিনগত রাতে বাংলানিউজকে বলেন, আশা করছি রোববার আমরা আদালতের আদেশের কপি হাতে পাবো। কপি হাতে পেলেই এক’দুদিনের মধ্যে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

উপাচার্য শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবশে নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

গত ২ আগস্টের অচলাবস্থা ও ছুটি শেষে শনিবার খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো। এদিন থেকে শুরু হবে ক্লাস।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হল প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এদিকে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অচলাবস্থার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের ওপর বিষেশভাবে নজর রাখা হচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বুয়েট ও জাবির আন্দোলনের পেছনে থাকার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত, হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন শিক্ষকের ওপর।

ভর্তি পরীক্ষা ও ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ঈদের ছুটি শেষে ক্লাসে ফেরা উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সবার সহযোগিতায় শিক্ষায় আমাদের দেশের যে অগ্রগতি উচ্চ শিক্ষায়ও সেই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময় ০০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।