ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের তোড়জোড়!

ফাহিম হোসেন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের তোড়জোড়!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিতে প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা। গত কয়েকদিনে তারা দফায় দফায় উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক, পরিকল্পনা উন্নয়ন পরিচালক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ একাধিকে পদে নিজেদের লোক পদায়ন করতে তারা তদবির করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন দপ্তরে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের ব্যাপক দাপট ছিল। এ পরিচয় দিয়ে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এই সময়ে বিএনপিপন্থিদের অনেকেও লিয়াঁজো করে সুবিধা নিয়েছেন।

তবে সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের প্রভাব বেড়েছে। তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন চাচ্ছেন।

রেজিস্ট্রার অফিসে শিক্ষা-১ শাখায় কাজ করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাবিলা নূর-উস-সাবা। গত কয়েকদিন থেকেই কলেজ উপ-পরিদর্শক অফিসের প্রধান অথবা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন (ডিপিডি) অফিসের পরিচালক হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।

নাবিলা সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও বিএনপিপন্থি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আ ফ ম ইউসুফ হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে পদায়নের তদবির করেছেন তিনি।

সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে স্বাস্থ্য-অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি রেজিস্ট্রার অফিসের শিক্ষা-২ শাখার প্রধান হতে চান। এ পদে থাকা মুন্সি শামস উদ্দিন আহম্মদ লিটন সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেয়েছেন।  

পরিবরহন অফিসের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন কামরুল হাসান। তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হতে চান। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময়ে সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামান, এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের লোক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

রেজিস্ট্রার অফিসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন আমজাদ হোসেন শিশির। তিনিও কলেজ পরিদর্শক হওয়ার জন্য তদবির করছেন।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ সফিউল্যাহ। তিনি উপাচার্যের অফিসে যোগ দিতে তদবির করছেন।

এস্টেট অফিসে সহকারী এস্টেট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন শাহেদ মিয়া। তিনি ট্রেজারার অফিসে আসতে চান।  

গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কামরুল হাসান, আমজাদ হোসেন শিশির, সফিউল্যাহ, নাবিলা নূর-উস-সাবা, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সহকারী রেজিস্ট্রার আহসানুল কবির ও ট্রেজারার অফিসের সহকারী হিসেব পরিচালক জহিরুল ইসলাম দল বেঁধে উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তদবির করেছেন।

এর আগেও একাধিকবার এসব বিষয়ে তারা উপাচার্যের সাথে দেখা করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় এই কর্মকর্তারা উপ-উপাচার্যদ্বয়, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের সঙ্গে অন্যান্য বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারাও ছিলেন।

তারা নিজেদের পদায়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাবিলা নূর সাবা বাংলানিউজকে জানান, রেজিস্ট্রার নিয়োগ হওয়ার সময় সিনিয়রিটির কারণে তিনি প্রশাসনের কাছে রেজিস্ট্রার পদের আশা জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিদর্শক বা ডিপিডির পরিচালক হওয়ার জন্য তিনি কোনো তদবির করেননি।

নাবিলা নূর সাবা বলেন, সেদিন সাবেক উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। আমি যেহেতু তার সচিব ছিলাম, তাই গিয়েছি। তাছাড়া সেখানে কামরুল হাসান, আমজাদ হোসেন শিশিরসহ অনেকে ছিলেন।

কামরুল হাসান, আমজাদ হোসেন শিশির এবং জহিরুল ইসলামরা সেখানে কেন গিয়েছেন, তার উত্তর নাবিলা দিতে পারেননি।

ওই বৈঠকে উপস্থিত কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেছেন, অধ্যাপক ইউসুফ একমাত্র নাবিলার জন্য তদবির করতেই উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।  

তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হওয়ার জন্য কোথাও তদবির করেননি বলে জানিয়েছেন কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আমি কখনোই কোনো তদবিরে যাইনি। উপাচার্যের কাছে তো আমি অফিসের কাজেও যেতে পারি।

তিনি বলেন, তবে রেজিস্ট্রার শামস উদ্দিন আহম্মদ একদিন আমাকে ডেকে বলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। আপনি দীর্ঘদিন পরিবহনে কেন পড়ে থাকবেন। আপনি একটু ভালো জায়গায় চলে আসেন। তখন আমি বিষয়টি বলেছি।


‘আমি তখন বললাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তো এখনো চাকরিতে আছেন। যদিও তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তবে তাকে পরিবর্তন করে যদি আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে আমার আপত্তি নেই’

কামরুল হাসান আরও বলেন, বরং আমি শুনলাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, আমি নাকি কনট্রোলার হতে চাই। আমি জানি না তিনি কেন এমন কথা বলেছেন।

কলেজ পরিদর্শক পদে যাওয়ার চেষ্টা করছেন জানিয়ে আমজাদ হোসেন শিশির বলেন, আমি আসলে এক সময় সততার সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করেছি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু দিতে পারলে আমার মনে শান্তি হবে। কিন্তু এক-পয়সা খাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।

কলেজ পরিদর্শক পদে নাবিলার তদবিরের কথা শুনে আমজাদ হোসেন শিশির বলেন, আমি শুনেছি নাবিলা ডিপিডির পরিচালক পদে যেতে চান।

এ সময় তার দপ্তরেই উপস্থিত ছিলেন সফিউল্যাহ। ভিসি অফিসে আসতে চাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি।

তদবির করার বিষয়ে মনির হোসেন বলেন, আমি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করে আমাকে শিক্ষা-২ অফিসে তার পদে দিতে বলেছি। আমি দীর্ঘদিন শিক্ষা শাখায়ই কাজ করছি। ডিন অফিসে ছিলাম। আমাদের মতো সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিভাগ-ইনস্টিটিউট অফিসে রাখলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই লোকসান।

এদিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে তদবির নয়, বরং যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেবেন বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়েগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রধান্য দিতে চাই।

উপ-উপাচার্য বলেন, এখানে তদবির বা এ জিনিসগুলো গুরুত্ব দেব না। মানুষ তো বলে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা গুরুত্ব দেওয়া হবে। এখানে কিছু নিয়ম-নীতি এবং ক্রাইটেরিয়া থাকে। সেগুলো পূরণ করলে, তার ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর।

প্রসঙ্গত, ৬ আগস্টের পর থেকেই বিএনপিপন্থি এসব কর্মকর্তা প্রশাসনিক ভবনে মহড়া দেওয়া শুরু করেন। কাকে কোন পদে বসানো যায়, এ বিষয়ে তারা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনে একটি সভাও করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
এফএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।