ঢাকা: দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সই করা নীতিমালা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ৬+ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত হবে। যেমন: ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকালে কোনো শিক্ষার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৫ বছর হবে অর্থাৎ সর্বনিম্ন জন্মতারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত।
পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ধারবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সাথে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষাবর্ষ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন।
ভর্তি কমিটি:
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ভর্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভর্তির তারিখ ও ফি:
কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের তারিখ ও সময় এবং আবেদন ফি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নির্ধারণ করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
ভর্তির জন্য আবেদন এবং শিক্ষার্থী নির্বাচন পদ্ধতি:
ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী নির্ধারিত সফটওয়্যারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করবে।
সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন ও আবেদন ফি গ্রহণ এবং ডিজিটাল লটারির ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকাশ কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের পূর্বে নির্বাচিত কারিগরি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সফটওয়ারের যথার্থতা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্য একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যাচাই করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি শূন্য আসনের সমান সংখ্যক অপেক্ষমান শিক্ষার্থীর তালিকাও প্রস্তুত করতে হবে।
ভর্তি কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে তালিকার ক্রমানুসারে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকাশিত অপেক্ষমাণ তালিকার ক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
শিক্ষাবর্ষের কোনো সময়ে আসন শূন্য হলে প্রকাশিত অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমানুসারে ভর্তি করে আসন পূরণ করতে হবে। এন্ট্রি/প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। ওই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি কমিটি কাগজপত্র যাচাইপূর্বক নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা মহানগরী ব্যতীত সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি/প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী নির্বাচনের জন্য ডিজিটাল লটারির বিষয়ে ‘ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি’ কেন্দ্রীয়ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করবে।
ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি জাতীয় পত্রিকা/ওয়েবসাইট ইত্যাদিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া জেলা/উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারবে।
যৌক্তিক কোনো কারণে সরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত হতে না পারলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন করবে। তবে সেক্ষেত্রে ডিজিটাল লটারির দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আবেদনে বিদ্যালয় পছন্দক্রম:
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫টি বিদ্যালয়ে ভর্তির পছন্দক্রম দিতে পারবে। তবে ডাবল শিফট স্কুলে উভয় শিফট পছন্দ করলে ২টি পছন্দক্রম (২টি বিদ্যালয় পছন্দক্রম) সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য হবে। বিদ্যমান অনলাইন ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সফটওয়ারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
শূন্য আসন নিরূপণ:
প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বিভিন্ন শ্রেণির শূন্য আসনের চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ করবেন। ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্ধারিত সফটওয়্যারে তার প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি ভিত্তিক শূন্য আসনের সংখ্যাসহ অন্যান্য তথ্য আপলোড করবেন।
ভর্তির আবেদন ও ফি:
অনলাইনে ভর্তি আবেদন ফি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে গ্রহণ করতে হবে। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদায় করা যাবে।
ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠান ও ফলাফল তৈরি:
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান আবেদন ও ডিজিটাল লটারির ফলাফল প্রকাশের যাবতীয় তথ্য ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির কাছে দেবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে লটারির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি/প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ নীতিমালা অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত তালিকার সমসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে লটারির মাধ্যমে দ্বিতীয় অপেক্ষমান তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্বাচিতদের তালিকা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং নোটিশ বোর্ডেও টাঙিয়ে দেবে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকার বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা যাবে না।
আসন সংরক্ষণ:
ঢাকা মহানগরীর সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা শর্তে ভর্তির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। ওই আসনে কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর যমজ ভাই/বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে অথবা যে সব যমজ ভাই/বোন নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে এ সুবিধা কোনো দম্পতির মোট তিন সন্তান পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে যমজ ভাই/বোনের আবেদন পাওয়া না গেলে ওই ৩ শতাংশ আসন সহোদর/সহোদরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা এক কর্মস্থল থেকে অন্য কর্মস্থলে বদলি হলে তাদের সন্তানদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে আবেদন করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটির আওতাধীন কোনো শিক্ষার্থীকে একই শ্রেণিতে উভয় বিদ্যালয়ের সম্মতির ভিত্তিতে পারস্পরিক বদলি ভিত্তিক ভর্তি করা যাবে।
এ নীতিমালা প্রয়োগকালীন কোনো অস্পষ্টতা/অসুবিধা পরিলক্ষিত হলে তা দূরীকরণে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ওয়েবসাইটে পিডিএফ দেখতে ক্লিক করুন
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
এমআইএইচ/এমজেএফ