ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ চলে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে!

কাদের পলাশ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১২
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ চলে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে!

চাঁদপুর: বাংলাদেশের ৬৪টি সরকারি মহিলা কলেজের মধ্যে অন্যতম ‘চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ’। ফলাফলের দিক থেকে কুমিল্লা বোর্ডে প্রতিবছর সেরা কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়।



কিন্তু এ কলেজের ইন্টারমেডিয়েট ও ডিগ্রি (পাস) শাখা মোটামুটি ভালোভাবে চললেও অনার্স কোর্সের শাখাগুলো চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে।

একলেজে ৩৪টি অনুমোদিত শিক্ষক পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১৮ জন। এর ফলে, খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে, এ কলেজের ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম। অনার্স কোর্সের জন্য পদ সৃষ্টির আবেদন করা হলেও এখনও তার অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এ কারণে উচ্চাশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শাখা ও অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

কলেজের ইতিহাস:
১৯৬৪ সালে তৎকালীন মহুমা প্রশাসক মো. নুরুল কাদির খানের (সিএসপি) উদ্যোগে ও চাঁদপুরের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষা বিস্তারে  কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর এরশাদ শাসনামলে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। পরে ‘চাঁদপুর মহিলা কলেজ’ নামকরণ থেকে হয়ে যায় ‘চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ। ’

চাঁদপুর শহরের হাসান আলী ও গনি মডেল হাইস্কুলের মুসলিম ছাত্রদের আহমেদীয়া হোস্টেল ভবনে চাঁদপুর মহিলা কলেজের প্রথম ক্লাস শুরু হয়।

১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগ দিয়ে কলেজের পথচলা শুরু। এরপর ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা কলেজটির স্বীকৃতি দেয়।

এরপর ১৯৭১ সালে শুরু হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ ও প্রায় ৪৫ বছর পর ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে শুরু হয় বাণিজ্যিক বিভাগের কার্যক্রম।

ডিগ্রি পর্যায়ে এ কলেজে বিএ কোর্স চালু হয় ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে। বর্তমানে ডিগ্রি পর্যায়ে রয়েছে বিএ ও বিএসএস শাখা।

জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ হওয়ায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করার লক্ষে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা ও ইতিহাস বিভাগে নার্স কোর্স চালু হয় এবং ২০০৯ সালে শুরু হয় ইংরেজি ও সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স কোর্স।

সমস্যা যত:
অনার্স কোর্স চালু হলেও এর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে। অথচ ৪টি বিষয়ে অর্নাস কোর্স চালু থাকলেও এ শাখাগুলোর জন্য কোনো নতুন পদ সৃষ্টি হয় নি। তাই, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক দিয়েই চলছে অনার্স কোর্সের কার্যক্রম।

এদিকে, ইংরেজি বিভাগের একমাত্র প্রভাষক জে.এম. তছলিম কবির কর্মরত। তিনি কলেজের যোগদানের পর আর কলেজের ধারে-কাছেও আসেননি। জানা যায়, তিনি ঢাকায় প্রাইভেট টিউটর ও ভিন্ন পেশায় কাজ করছেন।

অপরদিকে, ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা শামছুননাহার কাজে যোগদানের পর আর কলেজে আসেননি।

এ কলেজের বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ২শ ছাত্রী পড়াশুনা করছে। এত শিক্ষার্থীর জন্যে ‘স্মৃতি-৭১’ নামে একটিমাত্র ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। এ হোস্টেলে প্রায় ৩শ ছাত্রী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে।

কলেজ ছাত্রী, সুমাইয়া, জান্নাত ফেরদৌসী, আকলিমাসহ আরও একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানায়, ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধা দিতে আরও একটি হোস্টেল নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, অনেক মেয়েরা মেসে (ভাড়া বাড়িতে) থাকতে বাধ্য হওয়া তাদের অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

এছাড়া মেসে থেকে পড়াশুনা করলে খরচও অনেক বেশি পড়ে যায়, যা পরিবারের পক্ষে অনেক ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।

ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আফিফা ইসলাম কণা বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের কোনো শিক্ষক নেই। তাই, প্রাইভেট-ই এখন একমাত্র ভরসা। আর নিজে নিজে পড়ে কোনোমতে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। ”

সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী আরশিন আরা বাংলানিউজকে বলেন, “প্রতিদিন ক্লাসে আসলেও শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হয় না। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ”

অধ্যক্ষের বক্তব্য:
কলেজ অধ্যক্ষ মো. ছাদেকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের শিক্ষক সমস্যা থাকলেও খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছি। সরকারের কাছে আবেদন করেও আজ পর্যন্ত শিক্ষক সমস্যা নিরসন করতে পারি নি। ”

তিনি বলেন, “তবে দেশের নারীদের শিক্ষা বিস্তারে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ফলাফলের দিক থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। তবে শিক্ষক সমস্যা নিরসন হলে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ হবে দেশের নারী শিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ। ”

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১২
সম্পাদনা: শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।