ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রিয়াদ হত্যার ঘটনায় যবিপ্রবি’র ৪ ছাত্র বহিষ্কার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
রিয়াদ হত্যার ঘটনায় যবিপ্রবি’র ৪ ছাত্র বহিষ্কার

যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার ঘটনায় চার ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের পর গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই বহিষ্কারাদেশ কার্যকর করা হয়।



বহিষ্কৃতরা হলেন-যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র ফয়সাল তানভীর ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ছাত্র আজিজুল ইসলাম।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় চার ছাত্র বহিষ্কারের সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। একইসঙ্গে যবিপ্রবি ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

তবে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হলেও আইনের হাত থেকে পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নিহত রিয়াদের বাবা কাজী মনিরুল ইসলাম।

পুলিশের কাছ থেকে তদন্ত কার্যক্রমের দায়িত্ব সরিয়ে নিয়ে সিআইডিতে হস্তান্তর করায় তিনি এ আশঙ্কা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদকে হত্যা করে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা।

হত্যাকাণ্ডের পর জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইকবাল কবির জাহিদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ওই তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ও ভূমিকা থাকায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি সুব্রত বিশ্বাসের মাস্টার্স ভর্তি বাতিলসহ যবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রমে আজীবন নিষিদ্ধ, সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র ফয়সাল তানভীরকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ছাত্র আজিজুল ইসলামকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।

একইসঙ্গে যবিপ্রবি ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যও সুপারিশ করা হয়।
 
১৩ সেপ্টেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ওই প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর তা অনুমোদন করা হয় বলে জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, রিজেন্ট বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। পাশাপাশি যবিপ্রবি ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম শামীম হাসান ও তার সহযোগীদের দায়ী করেন। এরপর শুরু হয় দোষারোপের রাজনীতি। এ নিয়ে শহরে পাল্টাপাল্টি মিছিলও হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১৫ জুলাই রিয়াদের মামা রফিকুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, শাহীন, জিসান, সজীবসহ ছাত্রলীগের আট নেতাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও আরও দুই জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানকে।

কিন্তু গত দুই মাসে তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠানো হয়। সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। দুই মাস ধরে মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় এবার সিআইডিতে হস্তান্তর হলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না নিহত নাইমুল ইসলাম রিয়াদের বাবা কাজী মনিরুল ইসলাম।

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) তদন্ত করছিলেন। কিন্তু দুই মাসেও খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি তিনি। এরপর সিআইডির একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে আদৌও খুনিরা সনাক্ত হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। ছেলের হত্যাকারীদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে। এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার পাব কিনা জানি না।

তবে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনামুল হক জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শে সিআইডি তদন্ত করছে। এসআই তদন্তের দায়িত্ব পেলেও এখনো একজন সুপারিটেন্ডেন্ট কর্মকর্তা বিষয়টি তদারকি করছেন। অধিকতর তদন্তের জন্যেই মামলাটি সিআইডিতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের চেয়ে তারা বেশি সময় ধরে তদন্তের সুযোগ পায়। তাই সংশয়ের কোনো কারণ নেই।

যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এতে যদি বাদী বা নিহতের পরিবারের কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার বরাবর আবেদন করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।