ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়লেও মান বাড়েনি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪
দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়লেও মান বাড়েনি

ঢাকা: বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গুণগত পরিবর্তন হয়নি। তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছেন।


 
বুধবার বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে শাসন প্রক্রিয়া শীর্ষক সেমিনারে বিআইজিডির গবেষণা প্রধান ড. মিনহাজ মাহমুদ এসব কথা বলেন।
 
সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘দরিদ্রদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা সেবা ধীরে ধীরে আরও দুরূহ হয়ে উঠছে যা আমাদের আরো পশ্চাদগামী করে তুলছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী দলীয়করণ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই দুই খাতে বিশেষভাবে নজর না দিলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। ‘
 
ড. মিনহাজ মাহমুদ বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষা খাতের অগ্রগতি নিরূপণ করাটা সঠিক নয়, এক্ষেত্রে বরং গুণগত মান ও সৃজনশীলতার বিকাশ বিবেচনা ও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশে গবেষণা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এর পরিবর্তন ধীরে হলেও অগ্রগতি হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশার পাশাপাশি চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে হবে।
 
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জোনাথন রোজ। তিনি তার বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এক্ষেত্রে অধিকতর গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
 
গবেষণার ফলাফলে তিনি স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতার অভাব, ওষুধ শিল্পের গুদামজাতকরণ, চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের প্রতি অতি আগ্রহ, ভুল চিকিৎসা, ব্যাপক দুর্নীতি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবসহ পুরো স্বাস্থ্যখাতে নানা অসামঞ্জস্য ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
 
প্রাথমিক শিক্ষা খাতে নানা সমস্যার রোধের পাশাপাশি এ শিক্ষা খাতকে বিকেন্দ্রীকরণের উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
 
বিআইজিডি’র গবেষক ড. মীর্জা হাসান বলেন, উভয় খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলীয়করন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অনৈতিক হস্তক্ষেপ, জবাবদিহিতার অভাব খুবই সংবেদনশীল এই দুই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের অন্যান্য বিষয়ে অগ্রগতিকে ম্লান করে দিচ্ছে।
 
শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে বিষয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা মান বৃদ্ধি বিষয়ে আন্দোলন না করে নিজেদের বেতন ভাতা নিয়ে আন্দোলনে তাদের উৎসাহ বেশি।     
 
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস্ (সেইল্স্) এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান। এছাড়া  পেশাজীবি সংগঠন, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী, দেশি-বিদেশি এনজিও, আন্তর্জাতিক সংগঠন, সুশীল সমাজের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, রাজনীতিক এবং সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
 
ড. জোনাথন রোজ যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত কেনেডি স্কুল থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ম্যাসাচুসেটস্ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি স্থানীয় সরকারে জনঅংশগ্রহণ, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে শাসনপ্রক্রিয়া, অপরাধ ও রাজনীতি, বাণিজ্য এবং জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ে বাংলাদেশ, কেনিয়া, কমোরোস, নিকারাগুয়ায় গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক-এ দরিদ্রদের জন্য ন্যায্যতা বিষয়ে কাজ করছেন।
 
সেমিনারে পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা, দাতা গোষ্ঠী, দেশি বিদেশি এনজিও, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।