ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবিতে ৮ কোটিতেই দুলছে ৩ হলের ভাগ্য

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৫
ঢাবিতে ৮ কোটিতেই দুলছে ৩ হলের ভাগ্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে ৮ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় পরিকল্পনা অনুযায়ী সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) তিনটি আবাসিক হলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও কক্ষগুলো।

মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও কক্ষগুলো সংস্কারে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা।

যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়  থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১০ কোটি টাকা। ঘাটতি এই আট কোটি টাকা আপাতত যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন,  বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হয়তো এক-দুই কোটি টাকার যোগান দেওয়া সম্ভব। আট কোটি টাকার যোগান দেওয়ার মত সামর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।

আগামী ৬ এপ্রিল উপাচার্যের সভাপতিত্বে বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ভবন সংস্কার সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে। এই বৈঠকেই সার্বিক বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানান উপাচার্য।

কয়েক বছর আগে ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি, দেয়ালে ফাটল, কক্ষের ভেতরে পলেস্তারা খসে পড়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাঁচটি হলকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদুল্লাহ হল এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে শুরু হয়নি সূর্যসেন, মুহসীন ও জহুরুল হক হলের কাজ।

সর্ববেশ গত বুধবার ধসে পড়ে সূর্যসেন হল অডিটোরিয়ামের বারান্দার একাংশ। এর আগে ২০১৩ সালের ৮ মে দুপুরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিভি রুমের ছাদের পলেস্তার‍া ধসে পড়ে। গত সপ্তাহে সূর্যসেন হলের নিচতলার একটি কক্ষে ঝুলন্ত ফ্যান খসে পড়ে সিলিং থেকে। হলগুলোর কক্ষের ছাদ থেকেও যখন তখন পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।

এদিকে হলগুলোকে খুবই ঝুকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। প্রয়োজনীয় সার্ভে শেষে তারা বলেছে, হালকা বা মাঝারি ভূমিকম্প হলেই ধসে পড়তে পারে ভবনগুলো। ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। তাই আশু সংস্কার প্রয়োজন।

এদিকে হল তিনটির ঝুকিপূর্ণ কক্ষে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা রয়েছেন আতঙ্গে। উদ্বেগে রয়েছেন প্রাধ্যক্ষরাও। গত বৃহস্পতিবার মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আক্কাস, জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন এবং সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে এ উদ্বেগের কথা জানান।

প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর নভেম্বরে সূর্যসেন, মুহসীন ও জহুরুল হক হল সংস্কারে উপযুক্ত সার্ভে শেষে প্রয়োজনীয় নকশা প্রণয়ন এবং প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) ব্যুরো আব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের(বিআরটিসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এই সেন্টারটি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে পরিচালিত।

এরপর সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রয়োজনীয় সার্ভে শেষে একটি নকশা প্রণয়ন করেন। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি টাকা।

বুয়েটের ওই বিশেষজ্ঞ দলের ধারণা, যদি প্রণীত নকশা অনুযায়ী সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা যায় তবে ভবনগুলো নতুনের মতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং আগামী ২০-৩০ বছরে কোন সংস্কার প্রয়োজন হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বছর তিনেক আগে এ তিনটি হল সংস্কারে ‘সূর্যসেন-মুহসীন-জহুরুল হক হল সংস্কার’ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় হলগুলোকে ‘জরাজীর্ণ’ আখ্যা দিয়ে জরুরি সংস্কারে দুই অর্থ বছরে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর গত মার্চে বরাদ্দকৃত অর্থ ‍থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঢাবি কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। বাকী ৫ কোটি টাকা আগামী অর্থ বছরে ছাড় দেওয়া হবে।

প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা যায়, বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ পাওয়া গেলেও ঘাটতি থেকে যাবে আরও ৮ কোটি। কেননা সরকারের অনুমোদিত প্রকল্প আর সংশোধনের সুযোগ নেই। যদি সরকার থেকে অর্থ পেতে হয় তবে ‍পুনরায় নতুন প্রকল্প দিতে হবে। যা অনুমোদন হয়ে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেও ‘এত টাকা’ আপাতত যোগান দেওয়া ‘সম্ভব নয়’ বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।

কাজ চালিয়ে নিতে আপাতত দুটি বিকল্প আছে কর্তৃপক্ষের হাতে। নকশার পরিবর্তন করে ব্যয় কমানো বা অর্থের যোগান দেওয়া। কিন্তু বুয়েট বিশেষজ্ঞ দল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নকশার পরিবর্তন সম্ভব নয়। অর্থ যোগানে অসমর্থ কর্তৃপক্ষও। তাই পরিকল্পনা থেকে বাদ রেখেই শুরু হচ্ছে সংস্কার কাজ।

এ ব্যাপারে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বুয়েটকে বলেছি তাদের প্রণীত নকশা সংশোধন বা পরিবর্তন করে ব্যয় কিছুটা কমানো যায় কি না। কিন্তু বিশেষজ্ঞ দল বলেছে, এ নকশার কোনরূপ সংশোধন বা পরিবর্তন সম্ভব নয়। ’

‘যেহেতু নকশা পরিবর্তন সম্ভব নয়, তাই নকশা অনুযায়ীই কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সব কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব হবে না। পরিকল্পনা থেকে কিছু কাজ বাদ পড়ে যাবে। ’ বলেন প্রধান প্রকৌশলী।

তবে যে টাকা পাওয়া গেছে তা দিয়ে চলতি মাসেই হল তিনটির সংস্কারকাজ শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। বাকী অর্থের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।