ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আবারো দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে ইবি

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫
আবারো দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে ইবি

ইবি: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালে ২১২ কার্য দিবসের মধ্যে ১৪৪ দিন এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস বন্ধ থাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। এতে বিভিন্ন বিভাগের সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ সেশনজট।


 
ছুটির পর ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলে সেশনজটের এ ভয়বহতা কিছুটা কমার সম্ভাবনা দেখতে পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এর মধ্যেই শবে বরাত, গ্রীষ্মকালীন ছুটি, রমজান ও ঈদুল ফিতর মিলে ৫৫ দিনের দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

সেশনজটের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলসহ রমজান ও ঈদের ছুটি কমানোর দাবি জানিয়েছেন ইবির অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
 
জানা যায়, ছাত্রদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে ধর্মঘট, ২০ দলের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি, চাকরির দাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১২ কার্য দিবসের মধ্যে ১৪৪ দিন ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
 
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকরা বাসের চাপায় টিটু নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে টানা চার মাস বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম।
 
এরপর ২০১৫ সালের ০৪ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় সবকটি বিভাগেই স্থগিত হয়ে যাওয়া চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। কয়েকটি বিভাগে চলছে পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি। ঠিক এ মুহূর্তে আবারো বন্ধ হতে যাচ্ছে ক্যাম্পাস।
 
শবে বরাতের ৩ দিন, গ্রীষ্মকালীন ৭ দিন এবং রমজান ও ঈদুল ফিতর মিলে ৪৫ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এতে সেশনজটের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা।  
 
শিক্ষার্থীদের দাবি, ছুটি বাতিল না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে যে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল ও রমজানের ছুটি ১০ দিন করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
 
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ, শান্তা, ইংরেজি বিভাগের পলাশ, ঈশিতা, আইন বিভাগের আরাফাত, ব্যবস্থাপনা বিভাগের লতা, তুষার, সফিক বাংলানিউজকে বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় যদি বাড়িতেই থাকতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কি শিখবে শিক্ষার্থীরা। বাড়িতে গেলে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বলে, ‘এত বাড়িতে থাক কেন। তোমার পড়া লেখা কি শেষ’। তখন জবাব দেওয়ার কিছু থাকে না।  
 
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। আমরা চাই সেশনজট দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখে ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক রাখা হোক।  
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনুষদের সভায় শিক্ষকদের মতামত নিয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল ও রমজানের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর ইতোমধ্যেই আমরা আবেদন করেছি।  
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু সিনা বাংলানিউজকে বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করা হোক। তবে, রমজানের ছুটির ব্যাপারে সবার সঙ্গে কথা বলে উপাচার্য সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ছুটি বাতিল করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ করেছি।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তারা যতদিন ক্যম্পাস খোলা রাখতে চায়, আমি ততদিন খোলা রাখার পক্ষে।
 
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, অনুষদের ডিনদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার দাবি সবকিছুর চেয়ে অগ্রগণ্য হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার স্বার্থে যদি কিছু ছুটি বাতিল করা যায়, তাহলে ক্ষতি কিছুটা কমবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৫  
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।