ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবি’র ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এই দ্বন্দ্বের জেরে ২৪ দিন ধরে বিভাগের ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা।



শিক্ষকদের এমন আচরণ ও কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসান। পরে বিভাগীয় একাডেমিক সভার মাধ্যমে মনজুরুল হাসানকে পরীক্ষা কমিটি থেকে সরিয়ে অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলামকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। এর কিছুদিন পর এই কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক উম্মে সায়কাকে সরিয়ে অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদকে দেওয়া হয় সদস্য পদ। এমন প্রক্রিয়ায় গঠিত পরীক্ষা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান।

অভিযোগ আছে, নুরুল ইসলাম জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের দিয়ে মনজুরুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই কমিটির অধীনে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে থিসিস সুপারভাইজারদের সম্পর্কে সাদা কাগজে নেতিবাচক মন্তব্য লিখে তাতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে সই করিয়ে নেন মো. নুরুল ইসলাম ও মো. শাহেদুর রশিদ। সই না করলে পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে হুমকি দেন তারা।

এদিকে পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে যারা গবেষণা করেছেন তাদের প্রকৃত ফলাফল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে মাহেরা নাজনীন, শেখ মনিরুজ্জামান, রায়হান আহমেদ, শারমিন সুলতানা, মাহমুদ হাসান, শরিফুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, রেজওয়ানা পারভীন, ফাহিমা তাসলীম মিশু, মিনহাজ আহমেদ, তানজিদা শাহরিন, কাজী শাহেদ ইকবাল প্রমুখ।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এরা প্রত্যেকে স্নাতকে ভালো ফলাফল করলেও স্নাতকোত্তরে ভালো করতে পারেননি। এ নিয়ে এক শিক্ষার্থী আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, গ্রেডিং সিস্টেমে থিসিস ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় সিজিপিএ ২.২৫ এর নিচে পেলে ফেল ধরা হয়। কিন্তু পরীক্ষা কমিটির শিক্ষকদের অনুগত ৮/৯ জন শিক্ষার্থী আছেন, যারা থিসিস এবং ব্যবহারিকে সিজিপিএ ২ পেয়েও পাশ করেছেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েই মো. নুরুল ইসলাম ও মো. শাহেদুর রশিদের সঙ্গে মনজুরুল হাসানের দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে দাবি করেছেন মনজুরুল হাসান। ৭ নভেম্বর পরীক্ষা কমিটির কর্মকাণ্ড ও ফলাফলে অনিয়ম বিষয়ে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন মনজুরুল হাসান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মো. নুরুল ইসলাম ও মো. শাহেদুর রশিদ।

মনজুরুল হাসান ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী নিয়ে এসেছেন এমন অভিযোগ তুলে বিভাগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে বলেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ ডায়েরি না করায় বিভাগীয় একাডেমিক সভার মাধ্যমে গত ১৫ নভেম্বর থেকে বিভাগের সব ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, মো. শাহেদুর রশিদের অনুসারী বিভাগের একজন শিক্ষক সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক মনজুরুল হাসানের বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছেন। পাশাপাশি বিভাগে ও বিভাগের সামনে মনজুরুল হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য লিখে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছেন।

ঘটনা তদন্তে গত ৩০ নভেম্বর জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদারকে প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (কাউন্সিল/টিচিং) মো. আবু হাসানকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যবিশিষ্ট ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠন করে প্রশাসন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ ও ইতিহাস বিভাগর অধ্যাপক মো. তাইবুল হাসান খান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকদের দলাদলির কারণে বিভাগের এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে তারা এই দলাদলিতে ব্যস্ত থাকায় বিভাগের নিয়মিত ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যথা সময়ে ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়ায় অনেকে চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে পারছেন না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল জব্বার হাওলাদার বলেন, কমিটি কাজ শুরু করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মো. নুরুল ইসলাম বলেছেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।

মো. শাহেদুর রশিদ বলেন, আমরা একাডেমিক সভায় তদন্ত কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছি। আশা করি, তদন্ত শেষে যতো দ্রুত সম্ভব বিভাগ আবারও সচল হবে।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদ আশরাফ করীম বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এটা বিভাগীয় একাডেমিক সভার সিদ্ধান্ত। আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। সভাপতি হিসেবে আমি শুধু বিষয়গুলো সমন্বয় করি। কোনো সিদ্ধান্ত আমার নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।