ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় ভালো ফল?

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় ভালো ফল? ফাইল ফটো

ঢাকা: পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় এবার সব সূচকে ভালো ফল করেছে খুদে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা।


 
প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৮.৫২ শতাংশ ও ইবতেদায়িতে এই হার ৯৫.১৩ শতাংশ। প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন এবং ইবতেদায়িতে ৫ হাজার ৪৭৩ জন।
 
আর জেএসসিতে পাস গতবারের ৮৯.৩১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯২.৩১ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০২ জন, গত বারের তুলনায় বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৫৭ জন।
 
তবে জেডিসিতে কমেছে পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। এবার পাস ৯২.৪৬ শতাংশ, গত বার ছিল ৯৩.৫০ শতাংশ। আর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন, গতবার ছিল ১৯ হাজার ২৯০ জন।
 
সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপিত তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
 
শিক্ষামন্ত্রী জিএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের চিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলের মান বৃদ্ধির সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।
 
‘এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। যেমন- বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, নকলবিরোধী ব্যাপক প্রচারণাসহ নকল প্রতিরোধে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। ’
 
জামায়াতের হরতালের কারণে ২০১৪ সালের জেএসসি-জেডিসির চার দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এতেও গতবছর পাসের হারে নেতিবাচক প্রভাব ছিল বলে জ‍ানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া গতবার প্রথম গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নে ফল নিম্নমুখি হয়। আর প্রশ্ন ফাঁসের কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যাঘাত ঘটে প্রস্তুতিতে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফলাফলে।
 
এবার সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষাও ইতিবাচক ফলের পেছনের কারণ বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।
 
‘বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে প্রণীত সিলেবাস অনুযায়ী গত দুই বছরে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, চারু ও কারু কলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়গুলো পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত বছর থেকে গণিত বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা নামে একটি নতুন বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ’
 
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অনুত্তীর্ণ হওয়া পরীক্ষার্থীর হার কমেছে। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে।
 
পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ ছাড়াও শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
 
জেএসসিতে পাসের বিবেচনায় প্রায় সব বিষয়ে ৯৩-৯৯ শতাংশের ওপর। রাজশাহী বোর্ডে শারীরিক শিক্ষায় পাসের হার প্রায় শতভাগ (৯৯.৯৯ শতাংশ)। বরিশাল বোর্ডে ৯৭.১৭ শতাংশ হলেও অন্যান্য সব বোর্ডে এই বিষয়ে পাসের হার ৯৯ শতাংশের ওপর।
 
আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট বিষয়েও ভাল করেছে বরিশাল (৯৭.২০ শতাংশ) ছাড়া সব বিভাগ, বোর্ডের এই বিষয়ে পাসের হার ৯৯ শতাংশের বেশি।
 
বরিশাল (৯৭.২২ শতাংশ) ও চট্টগ্রামে (৯৮.৮৭ শতাংশ) ছাড়া বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল স্ট্যাডিজেও ৯৯ শতাংশের বেমশি পাস অন্যান্য বোর্ডে।

সাধারণ বিজ্ঞানে বরিশাল ৯৭.২০ ও সিলেট ৯৮.৫৭ শতাংশ হলেও অন্যান্য বিষয়ে ৯৯ শতাংশ প্লাস।
 
বিভিন্ন বোর্ডের এসব পাসের হার সার্বিক ফলাফলে প্রভাব রেখেছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে কিছুটা হোচট খেয়েছে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে।
 
গণিতে চট্টগ্রামে ৯৩ শতাংশ, দিনাজপুর, বরিশাল ও ঢাকায় ৯৬ শতাংশ, সিলেটে ৯৭ শতাংশ, কুমিল্লা ও যশোরে ৯৮ শতাংশ থাকলেও পাসের হার রাজশাহীতে ৯৯ শতাংশ, কুমিল্লায় ও যশোরে ৯৮ শতাংশ।
 
ইংরেজিতে চট্টগ্রামে ৯১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৯২ শতাংশ, ঢাকাং ৯৩ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯৪ শতাংশ, বরিশালে ৯৫ শতাংশ, রাজশাহী, যশোর ও সিলেটে ৯৬ শতাংশের বেশি পাস করেছে।  
 
বাংলায় ভাল করেছে কুমিল্লা বোর্ড (৯৯.৬৬ শতাংশ)। তবে বরিশালে ৯৭ শতাংশ এবং বাকী বোর্ডে পাস ৯৯ শতাংশের ওপর।
 
প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় ভালো ফল পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতেও গতবার মাত্র চার সেট প্রশ্ন হলেও এবার ৩২ সেটে প্রশ্ন করায় প্রশ্ন যেমন ফাঁস হয়নি, তেমনি শিক্ষার্থীরা ভালো প্রস্তুততি নিতে পারায় ফলাফলে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর।
 
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথমিকে বাংলায় ৯৯.৭৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৯.১৮ শতাংশ গণিতে ৯৯.৩৬ শতাংশ, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৯.৭৮ শতাংশ, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৯.৭২ শতাংশ, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় ৯৯.৯১ শতাংশ পাস করেছে।
 
ইবতেদায়িতে দেখা যায়, বাংলায় ৯৯.৫৮ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৭.৭২ শতাংশ, গণিতে ৯৮.৬০ শতাংশ, কুরআন ও তাজবীদ এবং আকাইদ ও ফিকহ্ বিষয়ে ৯৯.৬৩ শতাংশ, আরবিতে ৯৮.৫৭ শতাংশ এবং পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৯.১৪ শতাংশ।
 
গতবছর বরাদ্দ না পাওয়ায় অর্থাভাবে মাত্র চার সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর। এতে এক জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস হলে সারা দেশে এর প্রভাব ছিল।
 
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, এবার বেশি সেট প্রশ্ন তৈরি করায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়নি, পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিতে ভালো করেছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।
 
এই ধারাবাহিকতায় আগামীতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ আরও বাড়বে বলে আশা করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের।
 
** ‘সৃজনশীল আর হরতালের হোঁচটে জিপিএ-৫ কম’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি, ২০১৬
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।