ঢাকা: অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
শিক্ষকদের এই নজিরবিহীন কর্মবিরতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায়।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষার মাঝপথে এই কর্মবিরতি অনিশ্চয়তায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ডাক দেয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি। দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা,রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ সারা দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ঘোষণা অনুযায়ী, কর্মবিরতি চলাকালে সান্ধ্যকালীন কোর্সসহ সব ধরনের নিয়মিত ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে সেমিস্টার ফাইনাল বা কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
রোববার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অসঙ্গতি দূর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের মর্যাদা ‘অবনমনের’ প্রতিবাদ ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে গত আট মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শুরুতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বক্তব্য-বিবৃতি ও নির্দিষ্ট সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। সরকারের কোনো মহল তাদের সঙ্গে আলোচনা না করায় ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিরা দেখা করলে মন্ত্রীরা তাদের দাবির ব্যাপারটি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি গঠিত হয়।
তবে গত ১৫ ডিসেম্বর পে-স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর তাতে শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
তাদের অভিযোগ, গত ৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গেজেটে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কালোব্যাজ ধারণ ও ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) আন্দোলনের প্রথম দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে বটতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হয়েছিল তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় লাগাতার কর্মবিরতিতে যেতে শিক্ষকেরা বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোন সেশনজট নেই। তবে আন্দোলন দীর্ঘদিন চললে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে পারে। আর এজন্য সরকারই দায়ী থাকবে।
২ জানুয়ারি কর্মবিরতি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন পর্যায়ের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মাকসুদ কামাল আরো বলেন, সিনিয়র মন্ত্রীরা পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এটা যাদের বাস্তবায়নের কথা তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। অর্থাৎ শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে, এমন কেউ নিশ্চয় আছে।
এদিকে সোমবার (১১ জানুয়ারি) কর্মবিরতির প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের রুমগুলোতে ঝুলছে তালা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সোমবার (১১ জানুয়ারি) কর্মবিরতির প্রথম দিনে দেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের রুমগুলোতে তালা ঝুলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত আট মাস ধরেই আমরা কথা বলার চেষ্টা করে আসছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দশ মিনিট কথা বলতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু একটি অসৎ মহল চেষ্টা করছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে।
মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শিক্ষকরা কখনও আপস করবে না উল্লেখ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঘোষিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে অসঙ্গতি নিরসনের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সোমবার ( ১১ জানুয়ারি) অচল হয়ে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। সকাল থেকেই শাবিপ্রবির সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে হয়নি কোন ক্লাস ও পরীক্ষা। বিভিন্ন বিভাগে পূর্বঘোষিত পরীক্ষা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমরা আট মাস তাদের সময় দিয়েছি। বেতন ভাতা নিয়ে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই, আমাদের একটা মর্যাদা ছিল, সেটা নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রকম হলে শিক্ষকতা পেশায় আর মেধাবীরা আসবে না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে কর্মবিরতি পালন করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সব শিক্ষক ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ডাকে সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের আন্দোলনে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও এসেছে স্থবিরতা। কর্মকর্তারাও অঘোষিতভাবে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকদের এ আন্দোলনে।
আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না। এমন কি কোনো প্রকার একাডেমিক নথিতেও স্বাক্ষর করছেন না শিক্ষকরা।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের বিশেষ কোটাসহ অপেক্ষামাণ তালিকা থেকে ভর্তির কার্যক্রম চলছে। শিক্ষকদের আন্দোলনে যেন কর্মকর্তারাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তা অফিসের বাইরে অলস সময় পার করছেন। আন্দোলনের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ার শঙ্কায় ক্যাম্পাসে আসেনি অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ফলে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘আমরা ফেডারেশনের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। এজন্য আপাতত নতুন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে শুধুমাত্র একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করবো। ’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী পে-স্কেলের অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার(১১ জানুয়ারি) সকাল থেকে রাবিতে এ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক সমিতি।
রাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন ছুটি থাকায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তবে, ১ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খুলেছে।
অফিস খোলা থাকাকালীন বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মবিরতির কারণে সোমবার সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা।
রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, ছুটির কারণে এমনিতেই ক্লাস বন্ধ। তবে, পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রথম বর্ষের ভর্তি সংক্রান্ত কাজ বাদে সবধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন শিক্ষকরা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এর আগে শনিবার বেতন কাঠামো নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সংকট নিরসনে আমলাদের কোনো ভূমিকা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান সমিতির নেতারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বৈষম্যমূলক অষ্টম পে-স্কেলের প্রতিবাদ ও শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পে-স্কেলসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি জবি’র শিক্ষকদের।
লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন জবি‘র শিক্ষকরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সোমবার (১১ জানুয়ারি) থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না শিক্ষকরা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম।
অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয় ৩ জানুয়ারি (রোববার) থেকেই।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু হলেও এতদিন পরীক্ষা কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো-বিভাগ ইনস্টিটিউটে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না শিক্ষকরা।
চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকেরা। এর অংশ হিসেবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত চবিতেও কোনো বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না শিক্ষকেরা। ’
সোমবার সকাল থেকেই চবি শাটল ট্রেন যথারীতি চলাচল করলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই শূন্য।
ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী শাটল ট্রেন চলাচল করলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। ’
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতি আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (চুয়েট) কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা।
চুয়েট সূত্র জানায়, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় ক্যাম্পাস একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষকদের এই কর্মসূচি হওয়ায় চুয়েটের আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়(বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (১১ জানুয়ারি) থেকে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.খন্দকার শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
অষ্টম পে স্কেলে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য সরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শেকৃবি) লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে সমবেত হয়ে বেলা এগারোটা থেকে এ কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন শিক্ষকরা। চলে দুপুর একটা পর্যন্ত।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোনো অনুষদেই অনুষ্ঠিতব্য ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না শিক্ষকরা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম। শুধু মাত্র ফাইনাল পরীক্ষার ফর্ম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবনে যেতে দেখা গেছে। তবে মাসিক পরীক্ষা না হলেও ফাইনাল পরীক্ষা সময়মতো হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন একাধিক শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. সেকেন্দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে শিক্ষকদের হেয় করা হয়েছে। প্রস্তাবিত দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষকদের এ কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষা কার্যক্রম। সোমবার (১১ জানুয়ারি) দু’একটি বিভাগের ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত ক্লাশ-পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শিক্ষক সমিতি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার( ১১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করছেন রুয়েটের শিক্ষকরা।
কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে রুয়েটের সবধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা।
রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. তারিফ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। রুয়েটে সবধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। ফলে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েও অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
আরআই
** শিক্ষক ধর্মঘটে অচল নোবিপ্রবি
** পাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে
** কর্মবিরতিতে যবিপ্রবি শিক্ষকরা
** ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
** ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির
** শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচল শাবিপ্রবি
** শেকৃবি’তে শিক্ষকদের আন্দোলনে বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা
** শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল জাবি
** কর্মবিরতি পালন করছে রুয়েট শিক্ষক সমিতি
** বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
** কর্মবিরতিতে ইবির শিক্ষকরা
** লাগাতার কর্মবিরতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
** রাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে
** কর্মবিরতি: জবি ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষকরা