জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগ ও দু’টি ইনস্টিটিউটের মোট ২৬টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কোনো বিভাগেই নিয়মিত ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষণা অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গত ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছে।
গত শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সবাত্মক কর্মবিরতি চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে গত ৮ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগ ও দু’টি ইনস্টিটিউটের মোট ২৬টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা, স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা, এমফিল, পিএইচডি’র পাশাপাশি বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা রয়েছে।
পরীক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৪, ৪০৬ ও ৪০৭ নম্বর কোর্স, ২য় বর্ষের ২০১ নম্বর কোর্স, এমফিল, পিএইচডির ৬০১ ও ৭০১ নম্বর কোর্স এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের দু’টি ও এমফিল’র একটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদভুক্ত পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের দু’টি পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ২০১ ও ২০২ নম্বর কোর্স, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২১০৫ ও ২১০৬ নম্বর কোর্স, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০৬ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ১০২ ও ১০৩ নম্বর কোর্স, প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি’র ৬০৮ নম্বর কোর্স ও মাস্টার্সের ৫০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের তিনটি পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ) ২য় বর্ষের ১ম সেমিস্টারের দু’টি পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) ২য় বর্ষের ১ম সেমিস্টার ও ৩য় বর্ষের ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসহাক আলী বলেন, বেতন ও সম্মান বাড়ানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ ধরনের আন্দোলন কাম্য নয়। আলোচনার মাধ্যমে অতিদ্রুত একটি সমাধানে আসা উচিত।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সানাউল্লা মাহী বলেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে আমরা এমনিতেই ছয় মাসে বেশি সেশনজটে আছি। তারপর যদি এভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকে তাহলে আমরা ভয়াবহ সেশনজটে পড়বো। যা আমাদের শিক্ষা জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলায় কোনো বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, দাবি আদায় না পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এই অবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেটা নিয়েও আমরা চিন্তিত। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
জেডএস