ঢাকা: সীমিত সংখ্যক প্রার্থী নিয়ে অনুষ্ঠিত ৩৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফল সাড়ে তিন মাসেও প্রকাশ করতে পারেনি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
গড়ে দুই মাসে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলেও সাড়ে তিন মাসের দীর্ঘসূত্রিতায় ভোগান্তিতে রয়েছেন প্রার্থীরা।
এদিকে ফল প্রত্যাশীদের অনেকেই ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এক বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলের প্রত্যাশা এবং আরেক বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি- এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আরও কয়েক হাজার সরকারি চাকরি প্রার্থী। ফল প্রকাশে বিলম্বে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
অল্প কয়েক দিনের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার কথা জানালেও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলতে পারেনি পিএসসি।
গত ১২ জানুয়ারি ৩৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি, যাতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৮৮ জন। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১০ অক্টোবর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে দুই দফায় শেষ হয় ১২ এপ্রিল।
৩৫তম বিসিএসের প্রার্থীরা বাংলানিউজকে বলেন, গড়ে দুই মাসে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ৩৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফল ৮৯ দিনে, ৩৩তম বিসিএসে ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশ হয়েছে। আর কিছু কিছু বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফল দেড় মাসের মধ্যেও প্রকাশ হয়েছিল।
তারা বলেন, ৩৫তম বিসিএসের প্রার্থী কম। ৩৩তম বিসিএসে বেশি সংখ্যক প্রার্থী নিয়ে দুই মাসে ফল দিতে পারলে মাত্র ৬ হাজার প্রার্থীর জন্য এতো সময় লাগার কারণ কী, তাহলে কী দুর্নীতি করা হচ্ছে? জানতে চান প্রার্থীরা।
বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ ফল প্রস্তুত করে গেলেও নতুন চেয়ারম্যান আসার পর দীর্ঘায়িত হয় বলে দাবি প্রার্থীদের।
পিএসসির সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক চলতি বছরের ২ মে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রার্থীরা বলছেন, ৩৪তম বিসিএসের ভাইবার ফল হয়েছিল ৩৫তম লিখিত পরীক্ষার একদিন আগে। এবারও কাকতালীয়ভাবে যদি মিলে যায় তাহলে বিড়ম্বনায় পড়বেন প্রার্থীরা। কারণ আগামী ১ স্পেটম্বর থেকে ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে।
পরীক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ দিনেও ফল প্রকাশ না হওয়ায় মানসিক সমস্যার মধ্যে আছি। ভালোমতো প্রিপারেশন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিয়ে তারা ঝামেলার মধ্যে রয়েছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা এবং নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পরীক্ষা গ্রহণের জন্যও ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে। এছাড়াও প্যারালালি অনেক পরীক্ষা থাকে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৩৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে বলে বলেও আশা প্রকাশ করেন পিএসসি চেয়ারম্যান।
আগে এক বিসিএস চূড়ান্ত ফল প্রকাশে তিন বছর সময় লাগতো জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দেড় থেকে দুই বছরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। আমরাও কষ্ট করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে তিনটি বিসিএসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এরমধ্যে ৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার অপেক্ষা, ৩৬তম লিখিত পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়েছে এবং ৩৫তম ভাইবার ফল প্রকাশ বাকি আছে।
এরআগে গত ১ জুন ৩৪তম বিসিএসের ক্যাডার পদে প্রার্থীদের যোগদান করতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সর্বোচ্চ ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন প্রার্থী নিয়ে ২০১৫ সালের ৬ মার্চ ৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিসিএস বিধিমালা সংশোধনের পর নতুন নিয়ম ও সিলেবাসে ২০০ নম্বরে দুই ঘণ্টার এই পরীক্ষা হয়, আগে যেখানে ১০০ নম্বরে এক ঘণ্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। ওই বছরের ৮ এপ্রিল প্রিলিমিনারির ফলে উত্তীর্ণ হয় ২০ হাজার ৩৯১ জন।
বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮০৩ জন প্রার্থী নিতে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এরমধ্যে সাধারণ ক্যাডারে ৪৫৫ জন, প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৪, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৮২৯ জন, বিশেষায়িত শিক্ষা ক্যাডারে ৩৫ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ/