ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মন্ত্রীর হাতে আইনের খসড়া, কোচিংয়ে জড়ালে চাকরিচ্যুতি!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৬
মন্ত্রীর হাতে আইনের খসড়া, কোচিংয়ে জড়ালে চাকরিচ্যুতি!

ঢাকা: কোচিং বাণিজ্য এবং নোটবই বন্ধে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিচালিত পিস স্কুল বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠ‍ান অনুমোদন নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করছে সরকার।

দীর্ঘ দিনেও চূড়ান্ত না হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণে হাত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোচিং ও নোটবই বাণিজ্য বন্ধ করা নিয়ে শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের জোরালো দাবি থাকলে শিক্ষা আইনে তা যুক্ত করে চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হচ্ছিলো।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আইন চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করছিলেন। এমনকি আর্থিক লেনদেনের মতো অভিযোগও এসেছে।    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা ‍আইন চূড়ান্তকরণে নিজেই হাত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকলে চাকরিচ্যুত করার মতো শাস্তি যুক্ত করছেন মন্ত্রী।

এছাড়া নোট ও গাইড বই বন্ধেও আইনে ধারা যুক্ত এবং শাস্তি সন্নিবেশিত থাকবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ট একজন বলেন, ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে কাজ শুরু হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি শিক্ষা আইন। আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১০-১৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, একক কোনো বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এতো বেশি সভা করেননি। কালক্ষেপণ নিয়ে নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

কোচিং-বাণিজ্যের শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কঠোর শাস্তির বিধান থাকলে এতে অন্যরা ভয় পাবেন।

বেশ কয়েক বার মতামত নিলেও সর্বশেষ এপ্রিল মাসে মতামত নেওয়ার জন্য শিক্ষা আইন-২০১৬ এর খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

নোট ও গাইড বইয়ের বিষয়ে ওই খসড়ায় বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা প্রকাশক কেবলমাত্র সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন।

কোন ধরনের নোটবই বা গাইডবই প্রকাশ করলে অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।  

এছাড়া এনসিটিবির অনুমোদনহীন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই অনুসরণ করলে কিংবা কোচিং বাণিজ্য জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এমপিও (বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ) স্থগিত, কর্তন বা বাতিল করা হতে পারে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই ধারা লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ৬ মাসের জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা আইনের খসড়ায় শাস্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও এমপিও বাতিল এবং শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্তকরণের অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই তা চূড়ান্ত করবেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা আইনে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে আরও কড়াকড়ি অরোপ করা হচ্ছে। কোনো অনুমোদন না হলে কার্যক্রম চালানো যাবে না। কারণ সম্প্রতি বন্ধ করা পিস স্কুলগুলো অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত হয়ে আসছিল।

**কোচিং সেন্টার চালালে এমপিও বাতিল, জেল-জরিমানা

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।