জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ‘এ’, ‘বি’, 'ডি' ও ‘ই’ ইউনিটের বিষয়প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম প্রথম দিনের মত শেষ হয়েছে। আর প্রথম দিনেই ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ।
রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সকাল ৯টা থেকেই ভর্তিচ্ছু ও তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দিনভরই ছিল তাদের ব্যস্ততা-ছোটাছুটি।
ভর্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বিভাগ-দফতর ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই ছিল নবীনের পদচারণার পাশাপাশি ভর্তি কার্যক্রমের ব্যস্ততা।
ভর্তির প্রধানতম কাজ টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত অগ্রণী ব্যাংক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দেখা যায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের লম্বা লাইন। ব্যাংকের নিচ তলার বুথ থেকে ছাত্রীদের বিশাল লাইন একদিকে সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় উঠে গেছে। অন্যদিকে ছাত্রদের দীর্ঘ লাইন ব্যাংক থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগে গিয়ে ঠেকেছে। নবাগত শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক অভিভাবককেও (মা-বাবা-ভাই-বোন)।
এই লম্বা লাইন লেগে যায় ব্যাংকে মাত্র দু’টি বুথের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করা হয় বলে। যে কারণে টাকা জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। এই লাইনের মধ্যে ছিল আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মীর দাপট দেখিয়ে লাইন ভেঙে ‘স্বজন’ বা ‘পরিচত’দের টাকা জমা দিতে যাওয়ার মতো ঘটনা।
ব্যাংকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বুথগুলোর সামনে মোতায়ন বেশ কিছু পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল (প্রশাসন) বডির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ভিড় সামলাতে তাদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে পুরো সময়।
এ বিষয়ে কয়েকজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারা ব্যাংকে টাকা জমাদান পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মাত্র দু’টি বুথে টাকা জমা নেওয়ার কারণে শত শত শিক্ষার্থী-অভিভাবককে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এরমধ্যে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী কয়েকজনের দাপট দেখিয়ে লাইন ভেঙে ‘স্বজন-পরিচিত’দের টাকা জমা দিতে যাওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও বিরক্তিকর করেছে।
শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কেউ কেউ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি টাকা জমাদান পদ্ধতি এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ময়মনসিংহ থেকে মেয়েকে ভর্তি করাতে আসা রাইসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “আজ ভর্তির প্রথম দিন, তাই ভেবেছিলাম আজ হয়তো ভিড় কম হবে। কিন্তু আজকেও এই লম্বা লাইন পোহাতে হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় যদি কয়েকটি ভ্রাম্যমান বুথ রাখা হতো তাহলে বিষয়টা অনেক ভালো হতো। আমাদের ভোগান্তিও অনেক কমে যেতো। ”নওগাঁ থেকে আসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তিচ্ছু ফখরুল ইসলাম বেলার ১১টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, “সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখনও ব্যাংকের নাগাল দেখা যাচ্ছে না। কখন ভর্তি হতে পারবো কে জানে!”
ঠিক একইসময়ে কথা হচ্ছিল মেহেদি হাসান নামে আরও এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “সকাল ৭টায় ক্যাম্পাসে এসেছি। লাইন দীর্ঘ হোক অসুবিধা নাই। তবে দুঃখের ব্যাপার ছাত্রলীগের কিছু বড় ভাই বারবার এসে লাইনে একজন একজন করে দাঁড় করাচ্ছে। এতে বারবার মনটা ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া আর কোনো সমস্য মনে হচ্ছে না। ”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আর ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগে দু’টি বুথে (নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য) টাকা জমা নেওয়া হলেও এখন প্রথম বর্ষে ভর্তিকে কেন্দ্র করে আরও একটি বুথ বাড়ানো হয়েছে। ”
এছাড়া অ্যানালগ ব্যাংকিং হলেও তারা যথেষ্ট দ্রুত কাজ করছেন বলে দাবি করেন নাসির উদ্দিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, “আগামীকাল বুথ বাড়ানো যায় কিনা সেটা আলোচনা করা হবে। আর লাইন ভাঙার অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল আমরা দেখতে চাই না, হট্টগোল হয়েছে শুনেছি, এমন যেন আগামীকাল না থাকে সে বিষয়ে নজর রাখবো। ”
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে ‘এ’, ‘বি’, 'ডি' ও ‘ই’ ইউনিটের মনোনয়নপ্রাপ্তদের ২৯ নভেম্বর এবং ‘সি’ ইউনিটের মনোনয়নপ্রাপ্তদের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
ডিআর/এইচএ/