কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): কেরানীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০১৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
ইতোমধ্যে বেশিরভাগ স্কুলে ফরম পূরণের কাজও শেষ হয়ে গেছে।
এমনকি, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন উপজেলার সব মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে গাইড লাইন দিয়েছে। ফরম পূরণের নিয়ম ও ফি উল্লেখ করে স্কুলের নোটিশ বোর্ডে নোটিশ টাঙাতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথাও জানানো হয়েছে।
কিন্তু এসব আইন ও নীতি, কিছুরই তোয়াক্কা করছে না
কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ শুভাঢ্যা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি হয়ে উঠেছে অনেকটা ‘মগের মুল্লুকের’ মতো।
২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে ফরম পূরণে এ স্কুলে নেওয়া হচ্ছে বোর্ড নির্ধারিত ফির ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ।
তবে স্কুলের নোটিশ বোর্ডে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। সেখানে বোর্ড নির্ধারিত ফি উল্লেখ রয়েছে। এ বছর ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ৭৮৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ৬৯৫ টাকা দিতে হবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাধ্যতামূলক কোচিং ফি নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে (সর্বোচ্চ ২ বিষয়) অকৃতকার্যদের জন্য ক্রস ফি ৫০০ টাকা ও জামানত হিসেবে নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে, অন্যথায় এ টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
এতে সব ফি মিলিয়ে ওই স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় ২ বিষয়ে অকৃতকার্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের জন্য ৯ হাজার ৫৮৫ টাকা দিতে হবে। যা বোর্ড নির্ধারিত ফির প্রায় ৫ গুণ।
বিভিন্ন নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের পর এ বিষয়ে মুখ না খুলতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন সোহেল শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, তার সন্তান ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছে। তিনি সন্তানের ফরম পূরণের জন্য ১ হাজার ৬৯৫ টাকা নিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণ করেনি। পরে কোচিং ফি বাবদ আরো ১ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়ার পর ফরম পূরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুভাঢ্যা স্কুলের শিক্ষক মো. আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ক্রস ফি, কোচিং ফি ও জামানতের টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির নির্দেশে এসব ফি নেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে শুভাঢ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন সোহেল আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ২ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের থেকে প্রতি বিষয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে ক্রস ফি নেওয়া হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সুপারিশে জামানতের টাকা নেওয়া হয়েছে।
‘কোচিং ফি বাধ্যতামূলক নয়। তাছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের একটু চাপে না রাখলে তারা ঠিকমতো পড়ালেখা করতে চায় না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফার জাহান বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে অন্য কোনো ফি নেওয়ার বৈধতা নেই। যদি কেউ বাড়তি টাকা নিয়ে থাকে তবে তা ফেরত দিতে হবে।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এসআর