তিনি বলেছেন, জাতীয় বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা ব্যয় নয়, আমার কাছে মনে হয় বিনিয়োগ। কারণ এই অর্থ ব্যয়ে আমরা আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে গড়ে তুলছি।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের শিক্ষা সপ্তাহের স্লোগান ‘শিক্ষার আলো জ্বালবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্যোগের কথাও।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীন রাষ্ট্রের ক্ষমতা আবার সেই দোসরদের হাতে চলে যায়, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা ছিল যুদ্ধাপরাধী। তাদের হাতে দেশ পিছিয়ে যেতে থাকে। “১৯৯৬ সালে আমরা যখন ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলাম, তখন দেখি স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৪৫ ভাগ। একটি স্বাধীন দেশে এতো কম স্বাক্ষরতার হার ছিল সেসময়। এরপর আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিই। প্রতিটি মানুষ যেন অক্ষরজ্ঞান অর্জন করতে পারে সেটা ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এ দেশে স্বাক্ষরতার হার পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ ভাগে। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আবার তাদের হাত ধরে দেশ পিছিয়ে যেতে থাকে। স্বাক্ষরতার হার নেমে যায় ৪৪ ভাগে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অগ্রযাত্রা হয়েছিল আমাদের আমলে, সব এভাবেই পিছিয়ে যেতে থাকে। আমরা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করলাম। এখন দেশের স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে ৭১ ভাগে। আমাদের লক্ষ্য দেশে কোনো নিরক্ষরতা থাকবে না।
শিক্ষায় বরাদ্দকে বিনিয়োগ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট দিই, তা আমার কাছে ব্যয় মনে হয় না। আমি মনে করি এটা বিনিয়োগ। আমরা তো এই অর্থ দিয়ে ভবিষ্যৎ বংশধরদের গড়ে তুলছি।
প্রধানমন্ত্রী নতুন বছরে তার সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন অভিভাবকদের বই কিনতে হয় না। শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন নতুন বই পায়। এই নতুন বইয়ের ঘ্রাণে নতুন বই পড়তে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। “আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্যও ব্রেইল বই দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর ভাষা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য তাদের মাতৃভাষায় রচিত বইও বিতরণ করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশ বিনামূল্যে এতো বই বিতরণের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবে না। ”
সরকারপ্রধান শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা দেশজুড়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসসহ প্রযুক্তি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছি।
এ পর্যায়ে তিনি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের তাদের নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তি শিক্ষায় অগগ্রতির জন্য ল্যাপটপ ও প্রোজেক্টর উপহার দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি নিজের অর্থে তার এলাকায় এভাবে ল্যাপটপ ও প্রোজেক্টর উপহার দিয়েছেন। ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের ৫০ হাজার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু করা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তিনি শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের চাকরি সরকারিকরণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের কথা তুলে ধরেন বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী। উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭/আপডেট ১১৪৮ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/