ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবিতে বাড়ছে ভবন, কমছে সবুজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
ঢাবিতে বাড়ছে ভবন, কমছে সবুজ বিজনেস অনুষদ থেকে ঢাবি ক্যাম্পাস। ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের ছাদ থেকে তাকালে দেখা মিলতো এক খণ্ড সবুজের। ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে মনোরম পরিবেশে বিচরণ করে বেড়াতো শিক্ষার্থীরা। তবে সেই সবুজ আঙিনা সংকুচিত করে ক্রমান্বয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ফলে ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।

১৯২১ সালে তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষার্থী ছিল ৮৭৭ জন ও শিক্ষক ছিলেন মাত্র  ৬০ জন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ ও ১১টি ইনিস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৮ জন। আর শিক্ষক ১৯৯২ জন।
 
সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ছিল ৬০০ একর। বর্তমানে তা কমে অর্ধেকও নেই আর। ফলে নতুন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ফাঁকা জায়গায় নির্মাণ করতে হয়েছে/হচ্ছে একাডেমিক, আবাসিক ভবন।
 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সবুজের প্রয়োজনীয়তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আগে বুঝতে হবে। এখন যে পরিমাণ সবুজ আছে তা যেন না কমে সেই লক্ষ্য রাখতে হবে। ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে ঠিক। কিন্তু তা পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। খালি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করে সবুজায়ন করতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। কম দূরত্বে ৫ হল।  ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজ
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের মাঝখানে ছিল ছোট একটি মাঠ। সেই মাঠেই তৈরি করা হযেছে বহুতল ভবন ‘বিজয় একাত্তর হল’। যেখানে প্রায় দেড় হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের খেলাধুলার জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।
 
বিজয় একাত্তর হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, পড়াশুনা করার পাশাপাশি মানসিকতার বিকাশে শুধু রুমই যে দরকার, বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। প্রাকৃতিক পরিবেশও যথেষ্ট প্রভাব রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হল নির্মাণ করার সময় এটা খেয়াল রাখা জরুরি। হলের দিক বিবেচনা করলে সূর্যসেন, জগন্নাথ, জহুরুল হক হলকেই মোটামুটি যথার্থ হল বলা যায়। কারণ সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। অন্য হলগুলো ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে।

শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের বড় ৫টি হল এই অংশে অবস্থিত। এই হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু এই এলাকায় খেলার মাঠ রয়েছে শুধু কবি জসীম উদ্দীন হলে। জায়গা না থাকায় অন্য হলগুলোতে তৈরি করা যায়নি খেলার মাঠ।
 
মাস্টার দা সূর্য সেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সবুজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তবে ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে এখন যা সবুজ আছে তা যেন না কমে। কারণ শিক্ষার্থীদের মননশীলতার বিকাশে এটি একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।
 
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু টাওয়ার পাশেই নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশতলা শেখ রাসেল টাওয়ার। এছাড়া ফুলার রোডে খালি জায়গায় শিক্ষকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল মুনীর চৌধুরী ভবন। রোকেয়া হলের পাশেই তৈরি করা হয়েছে হাউজ টিউটরদের জন্য বহুতল ভবন।
পাশাপাশি বহুতল ভবন
এছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনের নামে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে চত্বরের সবুজ ঘাস তুলে কৃত্রিম ঝর্ণা, কলা ভবনের বটতলায় কংক্রিট, আমতলার সবুজ তুলে ফেলে বসানো হয়েছে পানির ফোয়ারা। শিক্ষার্থীরা এসবের প্রতিবাদ জানালেও কাজ হয়নি। আগে এই সবুজ চত্বরে গোল বেঁধে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আড্ডা দিতে দেখা যেতো।
 
এ বিষয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমিন সুলতানা বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসটা প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর। এখন কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় উল্টো সৌন্দর্যহানি হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাড়ানো হয়েছে। ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে বর্তমানে যা সবুজ তা সংরক্ষণের পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এসকেবি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।