এ যুগল শুধু নিজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, সৃজনশীল নাচ দেখিয়ে মন জয় করেছে দেশের হাজারো মানুষের। শুধুই কি তাই, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দ্বৈত নাচে হয়েছে চ্যাম্পিয়নও।
আসছে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতে ওড়িষ্যায় অনুষ্ঠেয় ইন্টান্যাশনাল ড্যান্স ফেস্টিটিভালে অংশ নেবেন তারা। এছাড়া একই মাসের ২০ ও ২১ তারিখে পুনেতে অনুষ্ঠেয় ‘ড্যান্স ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কানেক্ট’ ড্যান্স ফেস্টিভালে অংশ নেবেন। এখানে তারা দ্বৈত নাচ পরিবেশন করবেন। এই ফেস্টিভালে ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ডের নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেবেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ জুটি তাদের নাচের জগতে তাদের পর্দাপণের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
জুটির প্রথম জন মাটি সিদ্দিকী। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসে বাইরে সবাই তাকে ‘মাটি’ নামেই চেনে। বেড়ে উঠেছেন গাজীপুরের নয়নপুরে। তিন বছর বয়সে তার মা একটি নাচের ক্লাসে নিয়ে যান তাকে। সেই থেকে নাচের প্রতি আকর্ষণ। প্রথম পর্যায়ে ভাল লাগা থেকে নাচ করেছেন। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর নাচ হয়ে যায় ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়। এখন নাচই তার ধ্যানজ্ঞান। নাচের হাড়েখড়ি হয় গাজীপুরের কচি-কাঁচা একাডেমির নাচের শিক্ষক আশরাফী ফরিদ হোসেনের হাত ধরে। স্কুল ও কলেজ জীবনে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নাচের প্রতিযোগিতায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাযে ২০১৪ সালে ইউজিসি কর্তৃক আয়োজিত আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ নাচের একক প্রতিযোগিতায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। এরই মধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশনে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। করেছেন বেশ কয়েকটি খন্ড নাটকও। অভিজ্ঞতাও রয়েছে প্রোডাকশন হাউজে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার।
জুটির অন্যজন মোফাসসাল আল আলিফ। পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি ঝোঁক। স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ক্যাম্পাসে এসে নাচের নেশা পেশায় পরিণত হয়। বিশিষ্ট কোরিওগ্রাফার এম আর ওয়াসেকের হাত ধরে তার নাচের জগতে আসা। দেশে-বিদেশের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন নাচ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে জিতেছেন একাধিক পুরস্কার। অংশ নিয়েছেন থাইল্যান্ড ও ভারতের ড্যান্স ফেস্টিভালে। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আশ্রম’ নামের নাচের স্কুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নাচের সংগঠন কালবৈশাখীও তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে।
নাচের জগতে তরুণ প্রজন্মের বিরল জুটি আলিফ-মাটি জানান, কনটেমপোরারি নৃত্যের প্রতি দুজনেরই রয়েছে ব্যাপক ঝোঁক। এরই মধ্যে তারা সমসাময়িক নাচের মুদ্রা নিয়ে তৈরি করেছেন ‘আর্ট অব মুভমেন্ট’ নামক ফটো সিরিজ। এছাড়া নিরীক্ষামূলক ফটোসিরিজ ‘রাইলীলা’ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পেয়েছেন। এ ধরনের ফটো-সিরিজ দেশে তারাই প্রথম শুরু করেন।
কনটেমপোরারি বা সমসাময়িক নাচ সম্পর্কে তারা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে এর ব্যাপক চাহিদা। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। নাচ শুধুই বিনোদন নয়। এর মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের দুঃখ ও সুখ ও নানা অভিব্যক্তিকে নিজস্ব মুদ্রায় ও ছন্দে প্রকাশ করা যায়। নাচের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানান, দেশের বাইরে থেকে সমসাময়িক নাচের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নাচের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চান তারা। একটি আন্তর্জাতিক মানের নাচের একাডেমি খোলার ইচ্ছাও আছে, যেখানে সৃজনশীল নাচের চর্চা করা হবে। তারা একসঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করতে চান সারাজীবন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
জেএম