ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কোমলমতি শিশুর মুখে নতুন বইয়ের হাসি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৮
কোমলমতি শিশুর মুখে নতুন বইয়ের হাসি নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস

রাজশাহী: সকাল সাড়ে ১০টা। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের হরিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ছোটাছুটি করছিলো একদল শিশু। তাদের কলরবে গমগম করছিলো স্কুল প্রাঙ্গণ। যেন স্বর্গের হাসি ভর করেছিল ওদের মুখে। সবার হাতেই ছিলো নতুন বই। উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে হাত বুলিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছিলো তারা।

নতুন বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পাওয়ার খুশিতে হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলো শিশুদের মুখ। খালি হাতে স্কুলে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রঙিন ছাপা নতুন চকচকে বই।

বিনামূল্যের বই পেয়ে তাই শিক্ষার্থীরা আনন্দে মাতোয়ারা।

স্কুলের মাঠে নতুন বই বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এক শিক্ষার্থী। গায়ে ধুলায় মলিন জামা। কিন্তু চোখেমুখে তার আনন্দের আভা। কাছে গিয়ে জানা গেলো তার নাম আসাদুজ্জামান। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। বাড়ি স্কুলের পাশের সুচরণ গ্রামে। নতুন বই পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে লাজুক হাসি দিয়ে তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘খুব ভালো লাগছে’।

হরিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফিজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বছরের শুরুতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত। এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা সকাল সাড়ে নয়টা থেকে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছি’।

নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দেখা হয় কাটাখালীর মাসকাটাদীঘী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। এ সময় তাদের মধ্যে নতুন বই পাওয়ার উচ্ছ্বাস স্পষ্টই লক্ষ্য করা গেছে। তাদের চোখেমুখে যেন নতুন বই পাওয়ার আনন্দ ফুটে উঠেছিলো।

এদের একজন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর আলম। তার কাছে নতুন বই পাওয়ার
অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বাংলানিউজকে জানায়, ‘বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে তার। নতুন বই নিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করবে বলেও জানায় সে।

শিশুদের হাতে নতুন বই দেখে আনন্দিত অভিভাবকরাও।  

নতুন বছরে নতুন বইয়ের আনন্দ যেন ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে। বই নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় রাব্বী নামে এক শিক্ষার্থীর মা খাদিজা বেগমের সঙ্গে।  

কোমলমতি এই শিক্ষার্থীর মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা বছরের শুরুতে বই পেলে তাদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি আলাদা একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। লেখাপাড়ার প্রতি অনুপ্রেরণা পায়। আগে তো এভাবে বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পাওয়া যেতো না’।

এদিকে, ২০১৮ সালের প্রথম দিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেওয়া হয়। এদিন ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই তুলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক এ উৎসব উদযাপনের ফলে এটা এখন সর্বজনীন উৎসবের রূপ পেয়েছে।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, রাজশাহীতে মাধ্যমিক পর্যায়ে এবার ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৭২০টি বই বিতরণ করা হচ্ছে।  

দাখিল পর্যায়ে বই বিতরণ করা হচ্ছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৯টি। এছাড়া ইবতেদায়িতে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৪০টি, ভোকেশনালে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৬টি, দাখিল ভোকেশনালে ৩ হাজার ৪০টি, ইংরেজি মাধ্যমে ১১ হাজার ৮৯৫টি এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে ছাপানো বই দেওয়া হচ্ছে ২৫৮টি।

রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাফিসা বেগম জানান, রাজশাহীতে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার  ৪৩৩টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৩টি বই।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।