চাকরি দিতে না পারলেও এখন উল্টো টাকা নেওয়ার কথাই অস্বীকার করছেন নানা কারণে সমালোচিত এই শিক্ষক। ধার-দেনায় দেওয়া টাকা উদ্ধারে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোতালেব।
শুধু তাই নয়, কোনো রকম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, লিখিত পরীক্ষা কিংবা নিয়োগ বোর্ডের যাচাই-বাছাই ছাড়াই আগের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের মাধ্যমে নিজের স্ত্রী আশরাফুন নাহার সোমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে বসিয়েছেন তিনি।
একই কায়দায় নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক পদে ভাগিয়ে নিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা ছোট ভাইয়ের নিয়োগও। এসব নিয়ে তুমুল বিতর্ক হলেও শুধুমাত্র আগের উপাচার্যের ‘দক্ষিণাস্ত’ হওয়ায় সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকেছেন রুহুল আমিন।
তবে নিজের বিভাগের সহকর্মী তিন নারী শিক্ষকের যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগে আর শেষ রক্ষা হয়নি তার। বুধবার (১৮ জুলাই) দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার ‘বিস্ময়জাগানিয়া’ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের সময় বেশ প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন রুহুল আমিন। আরো কয়েক শিক্ষককে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেন নিয়োগ বাণিজ্য সিন্ডিকেট। ওই সময় বিভিন্নভাবে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিযোগ, প্রায় দুই মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের ঠিক সামনেই ‘রেইন টাচ’ নামে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করেছেন রুহুল আমিন। এই ছাত্রাবাসের বাইরেও টাইলস করা। সুদৃশ্য গেট এবং ভেতরের ফিটিংসও নজর কাড়া। স্থানীয়রা বলছেন, এই ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে কম করে হলেও খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
একই সূত্র জানায়, গত মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি প্রাইভেটকার কিনেছেন শিক্ষক রুহুল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের মাছ বিক্রি এবং নকল প্রকাশনারও। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের প্রভোস্ট থাকাকালে অশালীন আচরণের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার আপত্তির কারণে জাককানবির প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, নামে-বেনামেও অনেক সম্পদ গড়েছেন রুহুল আমিন। তবে একজন শিক্ষক কীভাবে এত সম্পদের মালিক বনে যেতে পারেন এ নিয়েও সমালোচনা চলছে ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তপন কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘একজন সহকারী অধ্যাপক কত টাকা বেতন পান? তার এতো আয়ের উৎস কোথায়? সৎ থেকে চাকরির টাকায় এতো কিছু কী করা সম্ভব? আমরা দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চাই। ’
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক কথা আমরাও শুনেছি। আমাদের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ এলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
মালির চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি এই বিষয়টি দেখছেন। ’
তবে যৌন নির্যাতনসহ অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের মনগড়া অভিযোগসহ যা কিছ হচ্ছে তা আমাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। আর কেউ টাকা পেলে আমার কাছে আসবে, ওইখানে যাবে কেন? এটিও মিথ্যা। ’
তার দাবি, রূপালী ও পূবালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ছাত্রাবাস নির্মাণ ও প্রাইভেটকার কিনেছেন। আর যোগ্যতা থাকার কারণেই তার স্ত্রী ও ভাইকে চাকরি হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। বরং অন্য নিয়োগগুলোই অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৮
এমএএএম/এমএ