ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভোটের লাইনে অপেক্ষা করলে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি’র অভিযোগ

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
ভোটের লাইনে অপেক্ষা করলে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি’র অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল, স্যার এফ রহমান রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান রহমান হলসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাইনে দাঁড়ালেও শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে, এমনকি মিলেছে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীকে ‘যেকোনো উপায়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার’ অভিযোগও।

আগে থেকেই সিল মারা ব্যালট পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় সোমবার (১১ মার্চ) সকালেই বিক্ষোভ হয় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে। সেখানে প্রভোস্ট পদে পরিবর্তনও আনতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই ঘটনার জেরে রোকেয়া হলেও ব্যালট বাক্স তল্লাশি করার দাবি ওঠে এবং তখন বিক্ষোভও হয়।

ভোটগ্রহণকালে এসএম হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের নেতাকর্মীরা।  

সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, যে শিক্ষার্থীরা হলে থাকেন না, তাদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে ভোটারদের লাইন বড় রাখার জন্য যারা ভোট দিয়েছে তাদের আবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া খুব ছোট লাইন হওয়া সত্ত্বেও ভোটের লাইন শেষ হচ্ছিল। অর্থাৎ লাইনের সবাইকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। লাইনের গোড়ায় যেখানে ছাত্রলীগের নেতারা সব নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেখানে এক জটলায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা ভেতরে যাচ্ছেন এবং ফের বেরিয়ে এসে ওই জটলায় দাঁড়াচ্ছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সে লাইন বড় হতেও দেখা গেছে।  

আবার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা হল কার্ড পাননি, কেবল পেয়িং স্লিপ পেয়েছেন, তাদের ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অবশ্য ভোটার লাইনের সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায়।  

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এসএম হলের ভোটার। সকালে আসার পর আমাকে ছাত্রলীগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বের করে দেয়। বলে ভোট হয়ে গেছে। এখন আবার এসেছি ভোট দিতে। দেখি ঢুকতে পারি কি-না। অনাবাসিক ছাত্রদের সিংহভাগ ভোট দিতে পারেননি। এমনকি হলের অনেক শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ’

এসময় হলের গেটে ওই শিক্ষার্থীকে শাসিয়ে বলা হয়, ‘অনাবাসিকদের ভোট দেওয়া শেষ। এখানে অপেক্ষা করলে যে কোনো উপায়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। ’

কখনো বড় হওয়া আবার কখনো ছোট হয়ে যাওয়া ভোটার লাইনে দাঁড়ানো প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাইদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটা আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি গত দুই ঘণ্টা ধরে। ভোট দিয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। আমরা যেতে পারছি না। তবু আছি একটা ভোট দেওয়ার আশায়। ২৮ বছর পর এই নির্বাচন হচ্ছে, আর হবে বলেও আমার মনে হয় না। ’

এসময় পেয়িং স্লিপধারী ভোটাররা ‘ভোট চাই’ স্লোগান দিয়ে ভোটের সুযোগ দাবি করেন। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘সব হলেই একই চিত্র। সুষ্ঠু ভোট কোথাও হচ্ছে না। এখানেও ভোট বানচালকারীরা সফল। পেয়িং স্লিপের জন্য স্লোগান দিতে শিক্ষার্থীরা ভুলই করলো। আরও যেসব প্রথম বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল, তারা ঝামেলা হবে ভেবে হল ছেড়ে চলে গেলো। আমাদের সামনেই ঘটলো সব। ওরা এক্ষেত্রে চক্রান্তের শিকার হলো নিজেদের ভুলে। ’

একই চিত্র দেখা গেছে স্যার এফ রহমান  হলে। সেখানকার ছাত্রলীগের কর্মীদেরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের লাইন কোনোভাবেই ছোট হতে দেখা যায়নি। লাইনে দাঁড়ালেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না অনেকে। তাদের সামনের লাইন কোনোভাবেই ছোট হচ্ছিল না, কারণ ভোট দিয়ে অনেককেই আবার লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়।

এফ রহমান হলের সামনে ভোট দিতে অপেক্ষামান রিয়াজ নামের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে এসেছি। তখন থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দেওয়ার সুযোগটা পাচ্ছি না। ’

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গেটে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। লাইন যেন দীর্ঘ হয় এজন্য হলের জুনিয়র কর্মীদের ভোট দেওয়ার পর পুনরায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এখানে থাকা প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যের প্যানেলের নেতারা।

মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলেও একই অবস্থা। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হলেও পরবর্তীতে লাইনে সময়ক্ষেপণ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গেটে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলে ছাত্রলীগের নেতারাও পাল্টা স্লোগান দেন।  

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের গেটেও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের গেট থেকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

অবশ্য অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জোট, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও স্বতন্ত্র জোট সমর্থিত প্যানেল। পাশাপাশি আগামীকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
পিএম/এমএএম/এসকেবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ