ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
জাবির যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। অভিযোগটি যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠান বিভাগের সভাপতি। তবে, উক্ত সেলের প্রধানের কাছ থেকে সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার আশংকা করেছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থী।

সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার আশংকার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, এর আগে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের হুমকির মুখে সেই সেলে অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে গেলে সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতারের কাছে আমি নিপীড়িত হয়েছি।

তিনি আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন এবং আমার প্রমাণাদি নেননি। এছাড়াও সেই অভিযোগের কোনো বিচার এখন পর্যন্ত পাইনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, এর আগে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের এক ছাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও তার যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার অভিযুক্ত অধ্যাপককে উপাচার্যের দল করতে বাধ্য করেছেন। কিংবা সেই অধ্যাপক উপাচার্যের দল করছেন বলে উপাচার্য তার বিচার না করে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। গত দুই বছরেও রাশেদা আখতার সেই অভিযোগের কোনো তদন্ত করেননি।

অভিযোগকারীর অনাস্থার বিষয়ে জানতে চেয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা সে বলতেই পারে। এটা তার ধারণাপ্রসূত বিষয়। এ কমিটিতে শুধু আমিই থাকছি না। বরং আরও ছয়জন সদস্য আছেন। সবার তদন্তের মাধ্যমে এর আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে, যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। অভিযুক্ত সানওয়ার সিরাজ সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী জানান, ২০১৮ সালে তিনি তার তৃতীয় পর্বের একটি কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তিনি কোর্স শিক্ষক অভিযুক্ত সানওয়ার সিরাজের শরণাপন্ন হন। ওই সময় সানওয়ার সিরাজ ওই ছাত্রীর ফোন নম্বর নেন এবং যে কোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন শিক্ষক নিজেই ওই ছাত্রীকে ফোন করে পরীক্ষা কেমন হলো তা জানতে চান। সেদিন রাতে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ ছাত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঘোরাফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, হঠাৎ করে তার এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরে আমি বিভাগে গিয়ে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন, আইডি হ্যাক হয়নি। তিনি নিজেই ওইসব মেসেজ পাঠিয়েছেন।

ওই ছাত্রী আরও বলেন, পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক আমাকে জামা উপহার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় রাত যাপনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি এসব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক তার কোর্সে কম নম্বর দেন। তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, বিভাগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে নিজের যৌন হয়রানির বিষয়টি উত্থাপন করায় বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম তার ওপর ক্ষিপ্ত হন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘সেমিনারের পর বিভাগের তৎকালীন সভাপতি আমাকে ডেকে পাঠান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমি যৌন হয়রানির তথ্যপ্রমাণ তার কাছে হস্তান্তর করি। তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। আর অভিযোগের গোপনীয়তা রক্ষা না করে পরে তিনি বিষয়টি শিক্ষকদের মাঝে ঘটনাটি ছড়িয়ে দেন।

এ বিষয়ে বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম বলেন, ‘আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। সে আমার নামে যা বলেছে, তা বানিয়ে বলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সানওয়ার সিরাজ বলেন, ‘যে কেউ চাইলে যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারে। যেহেতু অভিযোগটি যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে গিয়েছে, তদন্তে সবকিছু প্রকাশ পাবে। তাতে যদি আমি দোষী হই তাহলে আমি শাস্তি পাবো। আর যদি কেউ মিথ্যা অভিযোগ তোলে তারও শাস্তি হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেন, গত বুধবার অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।