কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও মন্দিরে প্রার্থনা, বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শহীদ মিনার চত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এছাড়া ক্যাম্পাসের মেইন গেট, প্রশাসন ও একাডেমিক ভবন এবং হলসহ বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছরের ৩১ জুলাই। এর পর ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের ২৯ বছর পূর্ণ করেছে।
প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। মহানগর খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকাটি ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক বধ্যভূমি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি স্কুল (অনুষদ) রয়েছে। এখানে ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল ও পিএইচডি দেওয়া হয়।
স্কুলগুলোর মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজি, বাংলা এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন। আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ডিসিপ্লিন। জীববিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে অ্যাগ্রোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফার্মেসি ও সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন। সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা স্কুলের আওতায় তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে। এগুলো হলো- ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন। শিক্ষা স্কুলের অধীন রয়েছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। গত শিক্ষা বছর থেকে শিক্ষায় চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এছাড়া এর আগেই মাস্টার অব অ্যাডুকেশন (এমএড) এবং পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন অ্যাডুকেশন (পিজিডিএড) প্রোগ্রাম চালু করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৫শ’। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন ৩ শতাধিক এবং কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৩শ’। শিক্ষা কার্যক্রমের গত ২৯ বছরে ২৫টি ব্যাচে থেকে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েট সংখ্যা ১১ হাজার। যারা দেশে-বিদেশে দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে নানা পেশায় কাজ করছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, পাঁচটি আবাসিক হল, মেডিক্যাল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫টি বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, ডাকঘর ও মসজিদ। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন। এছাড়া চলতি প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ঊর্ধ্বমুখী (৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্বমুখী (১ম-৬ষ্ঠ তলা) ও ঊর্ধ্বমুখী (৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত গেস্ট হাউজের পার্শ্ব এবং ঊর্ধ্বমুখী, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ভবনে ঊর্ধ্ব ও পার্শ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় মসজিদের অবশিষ্ট অংশের নির্মাণ কাজ এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় শিগগিরই সাততলা আইইআর ভবন ও মেডিক্যাল সেন্টারের নির্মাণ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জিমনেসিয়াম এবং সুউচ্চ ও সর্ববৃহৎ আয়তনের ১০তলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, ১১তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান দেশবাসীসহ খুলনার সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃত অর্থে কার্যক্রম মূল্যায়নের দিন।
ফায়েক উজ্জামান বলেন, আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছি। চলতি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২২ সালের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যমত শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণাঙ্গরূপ পরিগ্রহ করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন দিক-নির্দেশনা দিতে হবে- এ বিষয়টি ধারণ করেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
এমআরএম/আরবি/