অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না, কখন আসবেন অতিথিরা, শুরু হবে বই উৎসব। আর একটু বেলা বাড়লো, রোদ উঁকি দিল, শুরু হলো উৎসব।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে ফেনী শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাঠের চিত্র ছিল এমনই।
অথচ বিগত কয়েক বছর আগেও প্রেক্ষাপট এমন ছিল। তখন শিক্ষার্থীদের নতুন বই হাতে পেতেই চলে যেত বছরের কয়েক মাস। এ ব্যাপারে বাংলানিউজের কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন ফেনী জেলা মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা বই কিনে পড়েছি। সবগুলো বই এক সঙ্গে টাকা দিয়েও লাইব্রেরিতে পাওয়া যেত না। এমনও হয়েছে সবগুলো বই জোগাড় করতে বছরের কয়েকমাস পার হয়ে গিয়েছে। এ প্রজন্ম ভাগ্যবান, নতুন বইয়ের গন্ধ বছরের প্রথম দিনই পাচ্ছে।
বছরের প্রথমে বই হাতে পাওয়া নিয়ে আরেকটু ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা জানালেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইতিবাচকের সমন্বয়ক নাসিম আনোয়ার জাকি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। কিছুদিন বই ছাড়া ক্লাস করতাম অথবা কারো কাছ থেকে পুরানো বই সংগ্রহ করতাম। এরপর যখন বই দেওয়া হতো তখন নতুন-পুরাতন মিলিয়ে দিতো। বই পেয়ে আনন্দের চেয়েও মন খারাপ হতো বেশি। পুরানো বইয়ের কারণে। পরে আবার লাইব্রেরি থেকে কিনে নিতাম যেগুলো পুরানো ভাগে পড়তো। অথচ এখন বছরের প্রথম দিনেই বই পেয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে সে এক অন্যরকম আনন্দ। বই উৎসব হয় স্কুলে স্কুলে। কি যে আনন্দ। আমার মতে সরকারের ভালো উদ্যোগের মধ্যে এটা একটা।
এবার আসি এ প্রজন্মের শিশুদের প্রসঙ্গে, যারা বছরের শুরুতে হাতে পেয়ে যায় নতুন বই।
শহরের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, নতুন বই হাতে পেয়েই উচ্ছসিত শিক্ষার্থীরা। স্কুলের এক কোনে বসেই কেউ কেউ দেখে নিচ্ছে বইয়ের ছবিগুলো। আবার কেউ নাকের ডগায় নিয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ শুকছেন। নতুন বই পড়ার সেকি বাধভাঙ্গা উচ্ছাস।
সকালে ফেনী শহরের সরকারি পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের সময় এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু পুরো শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীতে ভরপুর, কচি-কাঁচার কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে আছে পুরো এলাকা, নতুন বই পড়া নিয়ে তাদের সেকি আনন্দ! শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ডুকতেই সঙ্গে সঙ্গেই সালাম দিয়ে পড়া শুরু করলো শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ জানায়, নতুন বইয়ের ছবিগুলো তার কাছে ভীষণ ভালো লাগে, তাই সারাদিন সে ছবি গুলোই দেখে, মাঝে মাঝে গল্পগুলোও পড়ে।
ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখনও ক্লাস শুরু হয়নি, মাঠের এক কোনায় একদল ছাত্রী আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু আড্ডাতেও তাদের সেই নতুন বই। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর বইগুলো দেখছে, চোখে-মুখে তাদের আনন্দের ঝিলিক।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা জানায়, বছরের প্রথমে বই পেয়ে সে খুব খুশি, বইয়ের প্রথম থেকে সে পড়া শুরু করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, বছরের প্রথমে বই পেয়ে শিশুরা আনন্দিত। শিক্ষকরাও পাঠদানে উৎসাহী। বছরের প্রথমে বই পেয়ে যাওয়াতে বছর শেষ হওয়ার আগেই সিলেবাস শেষ করা যাবে।
শহরের রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর আগেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীতে ভরপুর। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। জানা গেলো নতুন বইয়ের কারণেই এতো আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস।
বিদ্যালয়টির নবম-দশম শ্রেণির ছাত্র নিলয় জানায়, নতুন বইগুলোর পাতা উল্টাতেই ভালো লাগা অনুভূত হয়।
বিদ্যালয়টির এক শিক্ষিকা জানান, একটা সময়ছিল, যখন তারা পড়ালেখা করতেন, তখন বছরের তিন-চার মাস চলে যেতো কিন্তু নতুন বইয়ের খবর থাকতো না। এদিক-ওদিক থেকে বই নিয়ে শুরু হতো পড়া। আর এখন শিক্ষার্থীদের কি সৌভাগ্য, বছরের শুরুতেই নতুন বই তাদের হাতে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়া-লেখার প্রতি আগের চাইতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসএইচডি/আরআইএস/