সদর ঝরণার মতো নূরজাহান বেগম, অর্জুন দাস, শেফালী রানি, শামছুল ইসলাম ও ওমর আলী শেখসহ শত শত অভিভাবক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছেন। তাদের সন্তানেরা নতুন বই হাতে নিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাঠটি পরিণত হয়েছিলো শিশু-কিশোর এবং অভিভাবকদের মিলনমেলায়। দু’টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থীর কলতানে ভরে উঠেছিলো ওই স্কুলের মাঠটি। শিক্ষক ও অভিভাবকদের সরব উপস্থিতি শিশু-কিশোরদের আনন্দের মাত্র আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে উচ্ছ্বসিত অভিভাবকেরা বলেন, বাচ্চাদের হাসিমাখা মুখই বাবা-মা’র খুশি। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে শিশুদের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ অনুভূত হয়। এই আনন্দ নিয়েই তারা সারাবছর পড়ালেখা করে। এতে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার আগ্রহও বেড়ে যায়।
শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোন্নাফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, মেধার বিকাশে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। বছরের শুরুতে বই দেওয়ার ফলে তৃণমূলের শিক্ষার্থীরাও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে।
নতুন বই হাতে নিয়ে স্কুল আঙ্গিনা থেকে মাঠের মধ্যে দৌড়াচ্ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী, জুবায়ের, বিশ্বনাথ, তানজিলা, তৃতীয় শ্রেণির শারমিন, রাখি রানি, শ্রীবাস, ৫ম শ্রেণির আল-আমিন, ৭ম শ্রেণির মাইশা আক্তার, তানজিলা খাতুন, সাদিয়া খাতুন, দেবাশিষ কর্মকার, রাফি শেখ, সিয়াম ইসলাম, মিষ্টি খাতুনসহ একাধিক শিক্ষার্থী।
কোমলমতি এসব শিশু-কিশোরদের কথা বললে তারা নতুন বছরের স্বপ্নের কথা বলে। নতুন বছর, নতুন ক্লাস, নতুন বই। নব উদ্যোমে পড়াশোনা করে সামনের বছর আরও ভালো রেজাল্ট নিয়ে আসার প্রত্যয় এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে শিক্ষকরাও আনন্দিত। বই বিতরণ উপলক্ষে শিক্ষাঙ্গনে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা ওয়াসিম বলেন, প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরও বছরের প্রথম দিনেই বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিন থেকেই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে।
শ্যামপুর আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মাহমুদুল হাসান উজ্জ্বল বলেন, অন্যান্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আজকে বই বিতরণ করা হয়েছে। সুশিক্ষিত আগামী প্রজন্ম গড়তে এ আয়োজন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, বুধবার সকাল ৮টায় নতুন ভাঙ্গাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বই বিতরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ। এরপর জেলাব্যাপী একযোগে ১৬৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৪০২টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ চলছে। জেলার ৭৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার বিই বিতরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এএটি