বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ‘ক্ষণিকা’ বাসের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এ ঘটনার জন্য বাস কমিটিকেই দোষারোপ করছেন।
এরইমধ্যে ক্ষণিকা বাসের ফেসবুক গ্রুপে ২০১৮ সালে দেওয়া একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এই স্টপেজের কি কোনো সুরাহাই হবে না? গতকাল আন্দোলন শেষে ৬টার বাস রাত ৭:৩০টার পরে কুর্মিটোলা আসে। হালকা ঝড়-বৃষ্টি ছিলো তাই লোকজনও কম ছিলো। আমি একাই নামলাম। তাকিয়ে দেখি ওভারব্রিজে ২/৪ জন ছাড়া মানুষই নাই। নেমে ব্রিজ পার হয়ে রেলস্টেশনের বাসস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়ালাম। ভাগ্যবশত বৃষ্টি হওয়ায় ৬-৭ জন বাইকার ব্রিজের নিচে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। এছাড়া একটা আপু ছাড়া আর একটা বান্দা ওখানে ছিল না! অবরোধের আফটার ইফেক্ট হিসেবে বাস পেতেও ২০ মিনিট লেগে গেছে। এই ২০ মিনিট আমার সাথে মাত্র একজন মহিলা ছিলো। আগেও একদিন পোস্ট করেছি যে জায়গাটা মোটেও সেইফ না! ভোরের বাস আর সন্ধ্যার বাসের জন্য ইনসিডেন্ট ঘটা ওয়ান-টুর বিষয় এখানে। সকাল ৭টার আগে আর সন্ধ্যার পর এখানে কোনো লোক থাকে না। কারণ এর আশপাশে এক র্যাডিসন হোটেল ছাড়া কিছুই নাই! হাসপাতালও বহুদূরে। কিছু তো করেন!! একটা ইনসিডেন্ট এর মাসুলে পুরা স্টপেজ ভুগতে গিয়ে পরে যেন আরও ২/৪টা কাহিনী না হয়ে যায়। যেখানে আমরা এমইএসের বেশিরভাগ মেয়ে ওই ইনসিডেন্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষ্যাপা! তারপরও এত ইনসিকিউরিটির মধ্যে রাখা হচ্ছে। ’
শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এই পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, ক্ষণিকা বাস কমিটিসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
হাবিবুর রহমান নামের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী লেখেন, একটা ঘটনা ঘটতেই হবে। তারপরে টনক নড়বে! কেন এমন হতে হবে প্রতিটা সময়? যেখানে আগেও বারবার মেয়েরা বলেছে যে এই জায়গাটা অনিরাপদ, তারপরেও কেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? কেন একজনের ধর্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে?
সাইফুল নামের আরেকজন লেখেন, ক্ষণিকা বাসে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি কুর্মিটোলার মতো নির্জন স্থানে বাস স্টপ না রেখে পার্শ্ববর্তী কোনো জনবহুল স্থানে বাস স্টপ রাখা, অথচ কোনো রহস্যজনক কারণে ক্ষণিকা বাসের কমিটি বাস স্টপ বদলাতে রাজি হচ্ছে না, এ বিষয়ে এখন ডাকসুর হস্তক্ষেপ জরুরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও হস্তক্ষেপ করতে হবে।
অন্যদিকে কুর্মিটোলা থেকে সরিয়ে ক্ষণিকা বাসের স্টপেজ ইসিবি চত্বর করার দাবি জানানো হলেও বাস কমিটির কারণে প্রশাসন আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে এই রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন, কুর্মিটোলা থেকে যারা বাসে ওঠেন তারা সবাই দুই তিন কিলোমিটার দূরে থাকেন। যার কারণে কুর্মিটোলার চেয়ে ইসিবি চত্বর স্টপেজ হলে তাদের সুবিধা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষণিকা বাস কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গ্রুপে একটা পোল করবো। সেখানে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে স্টপেজ ঠিক করবো। এখন আমরা ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস, বাস রুট কমিটি ও উপ-উপাচার্য মিলে ঠিক করবেন শিক্ষার্থীদের কথা শুনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ আগে অবগত করেনি। এখন জেনেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য যেটা নিরাপদ সেটাই করা হবে।
রোববার (০৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা বাস স্টপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢামেকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
**ঝোপের মধ্যে পড়ে ছিল ঢাবি ছাত্রীর বই-ঘড়ি-ইনহেলার
**শাহবাগ থেকে সড়ক অবরোধ তুলে ফের বিক্ষোভের ডাক
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
এসকেবি/জেডএস