সম্মাননা না দেওয়া হতাশ হয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি তার পরিবারের সদস্যরা। এতে তার প্রতি ‘অমর্যাদা’ করা হয়েছে বলে মনে করছেন শহীদের পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্যরা।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে আমার বাবা একজন। মনোবিজ্ঞান বিভাগে তার মতো একজনও নেই। সেক্ষেত্রে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনীতে সম্মাননা তিনি ডিজার্ভ করেন। মেয়ে হিসেবে নয় বিভাগের শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি তাকে সম্মাননা না দেওয়ার মাধ্যমে তার অমর্যাদা করা হয়েছে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি সকালে দুই দিনব্যাপী প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মোহাম্মদ রওশন আলী এবং মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের ব্যানারে বিশেষ অতিথি হিসেবে শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী মাসতুরা খানম’র নাম থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
অধ্যাপক কেয়া অভিযোগ করেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার মা’কে বিশেষ অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ওনাকে অনুষ্ঠানের দাওয়াতই দেওয়া হয়নি। এমন কি আমন্ত্রণ পত্রেও বিশেষ অতিথি হিসেবে তার নাম নেই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ুম সম্মাননা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দুইটি ক্যাটাগরিতে দুইজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে এবং বিভাগের উন্নয়নে অবদান রয়েছে এমন ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক মোহাম্মদ রওশন আলীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দুটি ক্যাটাগরিতে মীর আব্দুল কাইয়ুম নেই, তাই তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়নি।
আমন্ত্রণপত্রে নাম না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, মীর আব্দুল কাইয়ুম স্যারের স্ত্রীকে বিশেষ অতিথি করার বিষয়টি তিনি অবহিত। তিনি আমাদের স্যুভিনিয়রে লেখা দিয়েছেন। তার মেয়েও (কেয়া) জানেন। আগে থেকে অতিথির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কার্ডে মীর আব্দুল কাইয়ুম’র স্ত্রীর নাম ছিল না। একই কারণে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের নামও লেখা ছিল না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মীর আব্দুল কাইয়ুম স্যারের নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। একটি সেমিনার লাইব্রেরি করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি উনি সম্মাননা পাওয়ার দাবি রাখেন। সেক্ষেত্রে আমরা যখন মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হলে অবশ্যই তাকে দেওয়া হবে।
পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, যেহেতু এর আগে শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমকে বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সম্মাননা দেওয়া হয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সম্মানানা দেওয়া অবশ্যই উচিত ছিল।
পুনর্মিলনীতে আসা ফয়সাল আহমেদ নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, অনুষ্ঠানের প্রথম দিন যখন সম্মাননা স্মারক প্রদানে শহীদ কাইয়ুম স্যারের নাম উল্লেখ করা হলো না। তখন আমি খুব ব্যথিত হয়েছি। তখন আমি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে বলেছি তখন তারা আমাকে বলেছে এটা আমরাও জানতাম না।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম বাংলাদেশ এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্ব। এখন বিভাগ কিসের ভিত্তিতে সম্মাননা প্রদান করেছে আমার জানা নেই। সেজন্য আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহী শহরের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২০
এসএইচ