ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির পথ দেখালো ইউজিসি

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির পথ দেখালো ইউজিসি

ঢাকা: বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারে প্রবেশের উপযোগী করে তুলতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির সুপারিশে নতুন প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন ফ্ল্যাগশিপ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষকদের দক্ষ করতে আধুনিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনেরও কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইউজিসির ক্ষমতায়নে জনবল বাড়ানো এবং গবেষণার জন্য জোর দিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংস্থাটি।


 
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও উৎকর্ষ সাধনে ইউজিসি ২৯ দফা সুপারিশ করেছে।
 
ফ্ল্যাগশিপ বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মসংস্থান
ইউজিসি তার প্রতিবেদনে বলছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক যাতে উচ্চমানের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করতে পারে সেজন্য একটি স্বতন্ত্র, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের সেন্ট্রাল রিসার্স ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে; যা রিসার্স কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।
 
বর্তমান সময় ও ভবিষ্যৎ ধারণ করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শক্তি, পরিবেশ, সামাজিক বিজ্ঞান এবং গ্রিন আর্কিটেকচার বিষয়ে উন্নত শিক্ষাদানের জন্য বিশ্বমানের ফ্ল্যাগশিপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে; যা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিচারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান ও ভবিষ্যত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করে ইউজিসি।
 
ইউজিসি বলছে, গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কাঠামোবদ্ধ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরী ইন্টার্নশিপ চালু করলে তা চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা বাড়বে।
 
উচ্চশিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য হেকেপের অনুরূপ বৃহৎ আঙ্গিকে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। যাতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাগার স্থাপন করা যায় এবং ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মান ও দক্ষতা বাড়ানো যায়।
 
ইউজিসি মনে করে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষকদের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত সংবলিত একটি ডিরেকটরি তৈরি করা গেলে তাদের গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে। এই বিষয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
 
এসজিজি-২০৩০ এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামের কারিকুলাম পরিমার্জন করতে হবে।
 
বিডিরেনের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা অধ্যাপকদের লেকচার শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা যেতে পরে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তি নির্ভর ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
 
সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমানে মেম্বারশিপ এগ্রিমেন্টের আওতায় ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরির মাধ্যমে ই-রিসোর্স সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটিকে আরও সম্প্রসারণ, টেকসই ও কার্যকর করতে হবে।
 
গবেষণা ও শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জন
গবেষণা ও শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দেশের শিল্পান্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষাখাতে গবেষণার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। সরকারের ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালে লক্ষ্যমাত্র অর্জনে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বরাদ্দ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। সরকার শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণায় ব্যয় করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারে।
 
প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ ২০১৮-৩০ (এসপিএইচই ২০১৮৩০) অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ রাখার বিষয়ে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
 
শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের প্রধান শর্ত হিসেবে শিক্ষকদের পাঠদান সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি টিচার্চ ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেলক্ষ্যে সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ইউজিসি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
 
ইউজিসি বলছে, একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত ন্যাশনাল রিসার্স কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন। এই কাউন্সিল হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি স্বায়ত্তশাসিত রেগুলেটরি বডি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই বিষয়টি বাস্তবায়নে সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে।
 
শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণের সুযোগ থাকতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশিত হলে গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
 
সর্বোপরি, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পৃথক বেতনস্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মনে করে সংস্থাটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।