ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ড. আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে হাবিপ্রবি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
ড. আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে হাবিপ্রবি

ঢাকা: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. এম আবুল কাসেম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার দৃঢ় প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিত হয়েছে অধ্যয়ন এবং লেখাপড়ার মানসম্পন্ন পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি সাজিয়েছেন আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করেছেন পর্যাপ্ত ছাত্রাবাস এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বোচ্চ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে যা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।

উপাচার্য ড. আবুল কাসেমের বাস্তবায়িত পাঁচটি উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।

কৃষি গবেষণা কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ‘কৃষি গবেষণা কমপ্লেক্স’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে ডেইরি, পোল্ট্রি, মৎস্য এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলে গবেষণা।

ড. আবুল কাসেমের উদ্যোগে চালু হয়েছে বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারগুলোকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ভ্রম্যমাণ ভেটেনারি ক্লিনিক’। এ ধরনের অত্যাধুনিক ক্লিনিক বাংলাদেশে প্রথম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ই চালু করে। তার এই উদ্যোগের ফলে বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারগুলো উপকৃত হচ্ছে। দিনাজপুরের কৃষকদের কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কৃষি সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করেন। উপাচার্যের বাস্তবায়িত এই উদ্যোগও বাংলাদেশে প্রথম‌।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি, পিএইচডি, ফেলোশিপ, বিদেশে স্কলারশিপ ইত্যাদি সেবা এবং পরামর্শের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘ক্যারিয়ার এডভাইজারি সার্ভিস’ তিনি নিজ হাতে শুরু করেন। এই সার্ভিসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে।

উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন র‌্যাগিংয়ের মতো অপপ্রথার বিরুদ্ধে।

লালমনিরহাট জেলার বড়খাতা ইউনিয়নের শেখ সুন্দর গ্রামের মুসলিম পরিবারের সন্তান ড. এম আবুল কাসেম। পিতা মৌলভী নুর আহমেদ আকন্দ মাতা জমিরুন নেসা। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বোর্ড থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৭০ সালে রাজশাহী বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ভর্তি হন এবং ১৯৭৪ সালে প্রথম বিভাগ নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ে আমেরিকার উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে ১৯৮৩ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৭-৯৮ সালে জেএসপিএস স্কলারশিপ নিয়ে জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত গবেষক হিসেবে পোস্টডক্টরাল গবেষণায় অংশ নেন।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের শস্য রক্ষণাবেক্ষণ পরিদর্শক হিসেবে এক বছর চাকরি করেন। এরপর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। তবে ইচ্ছা ছিল অর্জিত জ্ঞান মানুষকে বিলিয়ে দেবার। তাই তিনি প্রভাষক হিসেবে ময়মনসিংহ গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৭৯ সালে। এক বছর পর তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তার মেধা দক্ষতা এবং কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে ক্রমান্বয়ে তিনি সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৭ সালে নিয়োগ পান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে।

অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং মেধাবী এ গবেষক জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ, কৃষকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ এবং তাদের নিকট কৃষি তথ্য প্রেরণ এবং এর প্রয়োগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা করেন যা কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ দিকনির্দেশনা প্রদান করছে।

প্রশাসনিকভাবে তিনি খুব দক্ষ। উপাচার্যের দায়িত্ব দক্ষ হাতে সামলানোর পাশাপাশি তিনি আর্কিটেকচার বিভাগের চেয়ারম্যান, ফিশারীজ অনুষদের ডিন, কৃষি সেবা কেন্দ্রের পরিচালক এবং ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজারি সার্ভিসের পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। বাকৃবিতে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের ডাইরেক্টর ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্র (BAUEC) এর পরিচালক এবং কৃষি মিউজিয়ামের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার এক্সটেনশন সোসাইটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার, কনফারেন্স এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে পেপার প্রেজেন্টেশন করেছেন তিনি।

কৃষি, কৃষি সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, যোগাযোগ প্রক্রিয়া, নারী ক্ষমতায়ন, টেকসই কৃষি উন্নয়নসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার গবেষণালব্ধ লিখনি প্রকাশিত হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন বইতে। আন্তর্জাতিক জার্নালে ৩৫টিরও বেশি এবং ১৪৫টিরও বেশি জাতীয় জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তার গবেষণা প্রতিবেদন। কারিগরি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ২৫টি।

ড. এম আবুল কাসেম ১৯৬৭ সালে ছাত্রলীগের সদস্য হন। ছাত্র জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এপ্রিল মাসে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতের জলপাইগুড়িতে কাজ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম’ এর সদস্য হন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের নির্বাহী সদস্য এবং ২০০০ সালে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনে ট্রেজারার নির্বাচিত হন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা পরিষদ’ ময়মনসিংহে নির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।